• রেকর্ড ফলন, কাঁচা আমেই লক্ষ্মী লাভ চাষিদের
    এই সময় | ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • প্রশান্ত ঘোষ, ভাঙড়

    আম উৎপাদনে এ বার অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভাঙতে চলেছে রাজ্য। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চলতি মরশুমে আমের প্রচুর ফলন হয়েছে। তাই গাছের ভার লাঘব করতে কাঁচা আম পেড়ে নিচ্ছেন অনেক চাষি। বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই কাঁচা আমে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। কাঁচা আম কিনে নিয়ে গিয়ে অনেকে আচার, আমপান্না, জেলি, আমের চাটনি, আম দই, আম সন্দেশ-সহ বিভিন্ন ধরনের রেসিপি বানাচ্ছেন। সেজন্য বাজারে কাঁচা আমের ভালোই চাহিদা রয়েছে। তাতে লাভের মুখ দেখছেন রাজ্যের আম চাষিরা।

    রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং হর্টিকালচার বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের খরা কাটিয়ে এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে আমের। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, রাজ্যের সর্বত্রই আম গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। এ বার তেমন ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় বেশির ভাগ আম এখনও অক্ষত রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে আম পাকতে আরম্ভকরবে। আর কয়েক দিনের মধ্যে পাকা আম ঢুকতে আরম্ভ করবে বাজারে। ফলন বেশি হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর রাজ্যের মানুষ অনেক কম দামে আম কিনতে পারবেন বলে আশাবাদী সরকারি আধিকারিকরা।

    ইতিমধ্যেই বহু চাষি কাঁচা আম বিক্রি করা শুরু করেছেন। কলকাতার লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে। খুচরো বাজারে কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। কাঁচা-মিঠা আমের দাম প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের দুটি ব্লক ছাড়াও রাজারহাট, বসিরহাট, বারাসাত, বনগাঁ, হাড়োয়া, স্বরূপনগর, দেগঙ্গা, সোনারপুর, বারুইপুর, ক্যানিং, জয়নগর, বিষ্ণুপুর ব্লকে অসংখ্য আম বাগান দেখতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে ভাঙড়ের হিমসাগর, ল্যাংড়া, কিষাণভোগ, আম্রপালি আমের স্বাদই আলাদা। এই আম খুবই রসাল হয়। খেতেও খুব সুস্বাদু। ভাঙড়ের দু'টি ব্লকে যা আম উৎপাদিত হয় তার সিংহভাগই কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমান-সহ আশপাশের জেলার বাজারে বিক্রি হয়।

    ভাঙড়ের আমচাষি মাদারবক্স মোল্লা বলেন, 'এ বছর আমের রেকর্ড ফলন হয়েছে। আমরা আম পের উঠতে পারছি না। বাজারে কাঁচা আমের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। দামটাও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছি।' মদারবক্স জানিয়েছেন, এ বার তিনি পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করে আমের বাগান লিজ নিয়েছেন। যা ফলন হয়েছে তাতে দ্বিগুণ টাকা উঠবে বলে আশা করছেন।

    আম বাগানের মালিক সমীর গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অনেকেই এখন কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে ভাঙড়ে আম কিনতে আসছেন। স্থানীয় পাইকাররা ছাড়াও ভাঙড়ের আম প্যাক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। ভাঙড় ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাহাজাহান মোল্লা বলেন, 'ধান, কাঁচা আনাজের পরে ভাঙড়ের অন্যতম অর্থকরী ফসল হলো আম। এ সময় টানা তিন মাস আম পাড়া, আম পাকানো এবং আম বিক্রি করার কাজে কয়েক হাজার মানুষ যুক্ত থাকেন। এটাই তাঁদের সারা বছরের জীবিকা।'

  • Link to this news (এই সময়)