এই সময়: কেউ বলছেন, নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন। এখন ‘ভাতা’য় আওতায় পড়ে গেলেন। কারও প্রশ্ন, ভাতা তো মিলবে। চাকরির সমাধান কী ভাবে হবে? আবার কারও কারও ধন্দ, ভাতা দেওয়া মানে কি স্কুলে যেতে হবে? না কি বসে বসে এই টাকা মিলবে? কিন্তু কতদিন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পর এই সব অজস্র প্রশ্ন, দ্বিধা–দ্বন্দ্ব ও ধন্দের মধ্যে পড়েছেন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষাকর্মীদের জন্য ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। শনিবার গ্রুপ–সি ও গ্রুপ–ডি কর্মীদের জন্য যথাক্রমে মাসিক ২৫ হাজার ও ২০ হাজার টাকা করে ভাতার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘোষণার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায়। অনেকেই বলছেন, যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন। আজকে তাঁদেরও ‘ভাতাশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় ফেলে দেওয়া হল। পাশাপাশি, চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের রিভিউ পিটিশন করার সিদ্ধান্তে অবশ্য তাঁরা খুশি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে ঝাড়গ্রামে রান্টুয়া হাইস্কুলের চাকরিহারা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষাকর্মী রিয়া মণ্ডল বলেন, ‘যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলাম। আমাদেরও ভাতাশ্রী প্রকল্পের আওতায় ফেলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার স্কুলে যাব কি না সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করলেন না।’ স্বস্তি যে কিছুটা মিলেছে তাও স্বীকার করছেন তিনি। রিয়ার কথায়, ‘সংসার চালানোর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণও তো রয়েছে। কী ভাবে ঋণ পরিশোধ করব তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তাই কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। রাজ্য সরকার আমাদের জন্য সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন করতে চলেছে জেনেও খুশি হয়েছি। আমাদের একটাই দাবি, ৬০ বছর যেন চাকরি করতে পারি।’ আবার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ব্লকের লক্ষ্যাকুড়ি হাইস্কুলের গ্রুপ–ডি কর্মী নন্দদুলাল বারিক বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শুনেছি। এখনও বিষয়টা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এখনই বলতে পারছি না সোমবার থেকে আমরা স্কুল যাব কিনা। সাংগঠনিক ভাবে সবাই মিলে আলোচনার মাধ্যমে যা সিদ্ধান্ত হবে সেই ভাবেই চলব।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের প্রায় ২৬ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছিল। পরে সুপ্রিম নির্দেশে যোগ্য শিক্ষকেরা স্কুলে যাওয়ার অনুমতি পেলেও শিক্ষাকর্মীদের স্কুল যাওয়ার পথটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বহু স্কুলেই শিক্ষাকর্মীর পদ শূন্য হয়ে গিয়েছে। এর জেরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহ-শিক্ষকদের স্কুলের তালা খোলা থেকে ঘণ্টা বাজানোর কাজ করতে হচ্ছে। স্কুল পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকে তাকিয়েছিলেন সকলেই। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় সাময়িক স্বস্তি মিললেও, খুশি নন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষাকর্মীরাও।
তাঁরা বলেন, ‘আমরা ভাতা তো চাইনি। কাজে ফিরতে চেয়েছি। যোগ্য শিক্ষকেরা যদি কাজে ফিরতে পারেন, তা হলে যোগ্য শিক্ষাকর্মী হয়েও কেন কাজে ফিরতে পারব না। এটা সরকারের দেখা উচিত।’ গোয়ালতোড় থানার পিংবনী হাইস্কুলের গ্রুপ-সি কর্মী সুদীপ্তচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন জানি না। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। এ ভাবে ভাতা দিয়ে কত দিন চলবে। যোগ্য হয়েও কেন স্কুলে যেতে পারব না?’ ওই স্কুলেরই গ্রপ-ডি কর্মী সুদেব সরকার বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ভাতার কথা ঘোষণায় সাময়িক স্বস্তি মিললেও স্কুলে ফেরা নিশ্চিত নয়।’ কেশিয়াড়ি ব্লকের নছিপুর আদিবাসী হাইস্কুলের গ্রুপ–সি কর্মী তুষার বলেন, ‘অবশ্যই ভালো পদক্ষেপ। মুখ্যমন্ত্রী যখন ঘোষণা করছেন নিশ্চয় ভালোর জন্য করছেন। তবু ভয় হয়, পরে আবার আইনি কোনও জটিলতা হবে না তো।’