এই সময়, শিলিগুড়ি: পথকুকুরের অত্যাচারে নাজেহাল শিলিগুড়ি। সন্ধ্যা নামলেই রাস্তায় দলবদ্ধ ভাবে আক্রমণ করছে তারা। ছোট গাড়ি কিংবা স্কুটি দেখলে তেড়ে যাওয়া পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু হাতে ব্যাগ কিংবা ঝোলা নিয়ে কাউকে দেখলেই রক্ষে নেই। রাত যত বাড়তে থাকে ততই বাড়তে থাকে পথকুকুরের দাপট। একা বাড়িতে ফেরাই কঠিন। শনিবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে শিলিগুড়ির মেয়রকে শুনতে হলো পথকুকুর নিয়ে নাগরিকদের এই জ্বালা।
শহরের হাকিমপাড়া, পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লি, কলেজপাড়া, সুভাষপল্লি-সর্বত্রই না কি পথকুকুরেরাই নাগরিকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। শিলিগুড়ি পুরসভাও শহরের পথকুকুরদের নিয়ে শঙ্কিত। কেবল ‘টক টু মেয়র’ই নয়, প্রতিদিনই শহরের কাউন্সিলারদেরও এ নিয়ে অনুযোগ শুনতে হচ্ছে। শিলিগুড়ি পুরসভার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই শহরের ডাম্পিং গ্রাউন্ড এলাকায় পশু হাসপাতাল, পশুদের চুল্লি তৈরির কাজ চলছে। একই সঙ্গে কুকুরের কামড়ে যাতে মৃত্যু না-হয় সেই জন্য স্টেরিলাইজেশনও চলছে।
গত মাসেই ৪৬টি পথকুকুরের স্টেরিলাইজেশন করা হয়। মে মাসে ফের শ''খানেক পথকুকুরের স্টেরিলাইজেশন হবে। মেয়র বলেন, ‘পথকুকুর নিয়ে নাগরিকদের সমস্যা অজানা নয়। সেই জন্যই নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ করা হবে।’ পথকুকুর নিয়ন্ত্রণে শিলিগুড়ি পুরসভার লড়াই আজকের নয়। শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের জন্মলগ্ন থেকেই চলছে। এর আগে একবার শহরের প্রচুর কুকুর ধরে নিয়ে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে ছাড়া হয়। খাবারের অভাব এবং তীব্র ঘ্রাণশক্তির জোরে অধিকাংশ কুকুরই ফের শহরে ফিরে আসে। কুকুর নিয়ে পুরসভার দ্বিতীয় সমস্যা পশুপ্রেমীদের আন্দোলন। পথ কুকুর মারা যাবে না। এমনকী নির্বীজকরণও করা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে শহরে কুকুর বাড়ছে।
নাগরিকদের উপরে রাতে কুকুরের হামলাও বাড়ছে। পাল্টা হামলা করতে গিয়ে বিপাকে পড়ার ঘটনাও রয়েছে। শিলিগুড়ির ক্ষুদিরামপল্লিতে পথ কুকুরকে মেরে ফেলার দায়ে গ্রেপ্তার হতে হয় হাকিমপাড়ার এক বাসিন্দাকে। সমস্যা মেটাতেই পুরসভার পক্ষ থেকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড এলাকায় পশু হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় জখম পশুর চিকিৎসা হবে এই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে। তেমনই বাড়ির পোষা কিংবা রাস্তার কুকুর মারা গেলে যাতে যেখানে সেখানে পশুর দেহ পড়ে না-থাকে, সে কথা মাথায় রেখেই পৃথক একটি চুল্লি তৈরি করা হচ্ছে।
কেননা, কুকুরের মতোই শহরে গাড়ি চালকদেরও সমস্যা গোরু এবং ষাঁড় নিয়ে। রাতের অন্ধকারে ষাঁড়ের গায়ে গাড়ি নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ার ঘটনাও কম নয়। গোরু কিংবা ষাঁড়ের পাশাপাশি মানুষের জখম হওয়ার ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে। এই সমস্যা মেটাতেই শহরের রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো ষাঁড় করে নিয়ে খোঁয়াড়ে রাখার পরিকল্পনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ির একটি গোশালায় প্রায় চল্লিশটি ষাঁড় দেওয়া হয়েছে।