• সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে প্রাণ গেল ডাকাবুকো ডাঁয়া গণেশের
    এই সময় | ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, আলিপুরদুয়ার: কোনও দলে নয়, চলাফেরা করত রাজার মেজাজে। একা একাই। কথায় কথায় মস্তানি, বিশাল দেহ নিয়ে জঙ্গলে রোয়াব দেখানোটা অভ্যাসে পরিণত করেছিল ডাঁয়া গণেশ। বুনোদের দলে থাকা কোনও মাদি হাতিকে মনে ধরলেই হলো, যে ভাবেই হোক তাকে ছিনিয়ে নিত সে। সেই ডাঁয়া গণেশকে প্রাণ দিতে হলো সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে।

    শুক্রবার রাতে আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জয়ন্তী রেঞ্জের ২৩ মাইল ডিপোর পাশে, জঙ্গলের গভীরে, বিশাল দাঁতালের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ডাকাবুকো ডাঁয়াকে। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, বাঁ দিকের বাহ্যিক দাঁত ভাঙা থাকায় বনবস্তির বাসিন্দারা ওকে ডাঁয়া গণেশ নামে ডাকতেন, এমনকী, দেবতা জ্ঞানে পুজোও করতেন। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিনভর চলে ওই সাংঘাতিক লড়াই। জঙ্গলে পাহারায় থাকা দুই বনকর্মী ওই দুই ‘সুপার জায়েন্ট’–এর লড়াই চাক্ষুষ করতে পারলেও কিছুতেই থামাতে পারেননি।

    প্রথমে ডাঁয়া গণেশ দাঁতালকে পিছু হটিয়ে দিলেও, শেষে পরাস্ত হতে হয় তাকে। নিজের শক্তির আস্ফালন দেখাতে গিয়ে উন্মত্ত দাঁতাল এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল যে, ডাঁয়া মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরেও তাকে দাঁতের আঘাতে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় সে। যাকে ঘিরে ওই প্রাণঘাতী লড়াই, সেই মাদি হাতিটি ঘটনাস্থলের সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছে দুই পুরুষের ‘যুদ্ধ’। শেষে পরাক্রমশালী দাঁতালের সঙ্গে সে মিলিয়ে যায় বনের গভীরে।

    সঙ্গিনীকে নিয়ে উন্মত্ত দাঁতাল চলে যাওয়ার পরে মাটিতে লুটিয়ে পড়া রক্তাক্ত ডাঁয়া গণেশের চিকিৎসার জন্য ছুটে যান বনকর্মীরা। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শুক্রবার রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। এ পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু শনিবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে বনকর্তাদের। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বুনো দাঁতালের আক্রমণে ডাঁয়া গণেশের ঘাড়ের সংযোগ স্থলে থাকা স্ক্যাপুলা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। যা বিরল বলে দাবি বনকর্তাদের।

    কণ্ঠার হাড় বা স্ক্যাপুলা–র কাজ কী? আকারই বা কেমন? মানব দেহের মতো স্ক্যাপুলা হাতিদেরও চলাফেরার ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ আকৃতির হয় এবং খুবই শক্ত। সংঘর্ষে ওই হাড় ভেঙে যাওয়ায় অবাক বনকর্তারা। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা ও অভিজ্ঞ বনাধিকারিক অপূর্ব সেন বলেন, ‘সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে নেমে পুরুষ হাতির মৃত্যুর বহু ঘটনা চাক্ষুষ করেছি। তাই বলে ‘স্ক্যাপুলা’ ভেঙে যাওয়ার ঘটনা আগে চোখে পড়েনি। এ থেকেই অনুমান, সংঘর্ষের অভিঘাত কতটা তীব্র ছিল।’ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণ সংরক্ষক নভোজিত দে বলেন, ‘এটা সত্যিই বিরল ঘটনা। সচরাচর এমন উদাহরণ দেখা যায় না।’

  • Link to this news (এই সময়)