‘হিন্দু না ওরা মুসলিম, এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে?’
আদিলরা জিজ্ঞেস করেছিল। পহেলগামে হিন্দু বেছে বেছে খুন করেছিল পর্যটকদের। তার বদলা নিয়েছেন ৬ প্যারা এসএফ-এর ঝন্টু আলি শেখ। ‘হিন্দু ভাইদের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে আমার ভাই।’ চোয়াল শক্ত করে এমনটাই বললেন ঝন্টুর দাদা শফিকুল। শনিবার দুপুরে যখন তেহট্টে ঝন্টুর দেহ এল, মিলেমিশে গেল হিন্দু-মুসলিম। জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সবার চোখে জল।
ভাইয়ের মৃতদেহে কাঁধ দিতে কতটা কষ্ট হয়? কতটা বুক ফাটে? একমাত্র দাদাই জানে। কিন্তু শফিকুল অন্য ধাতুতে গড়া। ঝন্টুকে শেষবার দেখতে ভিড় জমিয়েছিল সাধারণ মানুষ। শেষকৃত্যের আগে তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে গিয়ে হিন্দু-মুসলিম শিকেয় তুলে আগাগোড়া ধর্মনিরপেক্ষতার কথাই তুলে ধরলেন। উদাহরণ দিলেন সেনার।
শফিকুলের কথায়, ‘সেনার ধর্ম নেই। জাত নেই। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন সবাই মিলে এক থালায় খাই। এক খাবার ভাগ করে সবাই খায়। ভাই ভাই দেখতে হলে সেনায় আসুন।’ জঙ্গিদের সামনে বুক চিতিয়ে লড়েছেন ঝন্টু। গর্বের সঙ্গে ভাইয়ের বীরত্বের বর্ণনাও দিলেন, ‘ খবর এল ওরা জঙ্গলে লুকিয়ে আছে। ১০-১৫ জনের ছোট একটা দল নিয়ে ভাই বেরিয়ে পড়ে। নির্ভীক, ভয়ডরহীন। সবার আগে।’ এ কথা বলতে বলতে শফিকুলের গলা কি একটু কেঁপে উঠল? হ্যাঁ উঠল। কিন্তু বুঝতে দিলেন না। নিজেকে সামলে নিলেন।
তারপর চোয়াল শক্ত করে বললেন, ‘আপনারা টিভিতে শুনেছেন, হিন্দুদের বেছে বেছে মেরেছে। হিন্দুদের জানের বদলা নিতেই ভাই গিয়েছিল।’ তারপর কিছুটা থেমে বললেন, ‘আমার ভাই দেশের জন্য, দেশবাসীর জন্যে প্রাণ দিয়েছে। আমাদের কাছে দেশ সবার আগে।’ শফিকুল ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুবেদার। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আগেই পেয়েছিলেন। সেনা থেকে তাঁকে বলা হয়, যাও, ভাইকে নিয়ে যাও। বাড়িতে দেখা করে এসো। এই সময় পরিবারের তোমাকে দরকার। তাই শফিকুল এসেছেন। বললেন, ‘শেষকৃত্য সেরে ফিরে যাব।’
উত্তাল এই সময়ে বাহিনীর তাঁকে দরকার। শফিকুল খুব ভালো করে জানেন। দেশমাতৃকার সেবা তাঁর কাছে সবার আগে। শফিকুলের চোখ ঝাপসা, হাত মুষ্ঠিবদ্ধ। যেন বলছেন, ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।’