• দিঘার জন্য স্পেশাল ট্রেন দিয়েও বাতিল করে দিল রেল, মন খারাপ জগন্নাথভক্তদের
    এই সময় | ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • বাংলায় হচ্ছে জগন্নাথ মন্দির। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সেই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন। এ নিয়ে এখন দিঘায় মহোৎসবের প্রস্তুতি। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই দিঘার ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলেছেন। বাস, গাড়িতেও যাবেন বহু মানুষ। রেলের তরফেও বিশেষ ট্রেনের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে হঠাৎই মন্দির উদ্বোধনের তিন দিন আগে আরও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেই বিশেষ ট্রেন বাতিল করা হলো। কেন এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে অবশ্য পরিচালনগত সমস্যার উল্লেখ করা হয়েছে সেই বিজ্ঞপ্তিতে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে।

    গ্রীষ্মকালীন ও দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনকে সামনে রেখে অতিরিক্ত দু’টি বিশেষ লোকাল ট্রেন চালানোর কথা জানিয়েছিল রেল। ২৬ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত প্রতিদিন হাওড়া-দিঘা-হাওড়া এবং পাঁশকুড়া-দিঘা-পাঁশকুড়া এই ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল। হাওড়া থেকে দুপুর ১টা ১০এ ট্রেন ছেড়ে দিঘা পৌঁছনোর কথা ছিল বিকেল ৫টা ৩৫-এ। আবার ওই একই লোকাল বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে দিঘা থেকে ছেড়ে রাত সাড়ে ৯টায় হাওড়ায় পৌঁছনোর কথা ছিল।

    আর একটি লোকাল ট্রেন পাঁশকুড়া থেকে ভোর ৪টে৪৫ মিনিটে ছেড়ে দিঘা পৌঁছনোর কথা ছিল সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে। দিঘা থেকে সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে পাঁশকুড়া পৌঁছনোর কথা ছিল সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। রেলের এই ঘোষণার পরেই বহু যাত্রী দিঘার জন্য ব্যাগ গোছাতে শুরু করেন। কারণ, হাওড়া থেকে সে দিঘার ট্রেন সে অর্থে হাতে গোনা। তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস আছে বটে, তবে সে ট্রেনের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগও অনেক। এ ছাড়া কাণ্ডারী এক্সপ্রেস রয়েছে দুপুরের পর।

    তবে স্পেশাল ট্রেনের খবরে অনেকেই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। কারণ, এ সময়ে দিঘায় যেতে পারলে এক সঙ্গে রথ দেখা কলা বেচা হয়ে যেতো। সমুদ্র স্নানের আনন্দের সঙ্গে বড় পাওনা নতুন জগন্নাথ ধামের দর্শন। কিন্তু হঠাৎই রেলের বিজ্ঞপ্তি। তাতেই জানানো হয়েছে, 08113/08114 হাওড়া-দিঘা-হাওড়া ইএমইউ স্পেশাল এবং 08115/08116 পাঁশকুড়া-দিঘা-পাঁশকুড়া ইএমইউ স্পেশালের পরিষেবা, যেগুলি ৪ মে অবধি চলার কথা ছিল, তা পরিচালনগত কারণে বাতিল করা হচ্ছে।

    পাঁশকুড়া-হলদিয়া-দিঘা সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সরোজকুমার ঘড়া বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন সময়ে দিঘায় পর্যটকদের ট্রেনে যাতায়াত বাড়ে। তার উপর দিঘায় জগন্নাথধাম, কাঁথিতে সনাতনী সম্মেলন রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ ট্রেনে আসবেন। তাদের জন্য অতিরিক্ত দুটি স্পেশাল ট্রেন চালুর কথা জানানো হলেও পরে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। তবে অন্তত ৩০ এপ্রিলের জন্য স্পেশাল ট্রেনগুলি যাতে চালানো যায়, রেলের কাছে আবেদন জানাবে। কারণ এতে যাত্রীদের সমস্যা হবে।’

    তবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক উত্তম বারিক ফেসবুকে লেখেন, ‘আগামী ৩০শে এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘায় জগন্নাথদেবের মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের আশীর্বাদ নিতে এবং দর্শনের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ তীর্থযাত্রীরা। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে হিন্দুদের এই ঐক্য এবং ভক্তি দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছে কেন্দ্রের স্বৈরাচারী বিজেপি সরকার। ২৬শে এপ্রিল থেকে ৪ঠা মে পর্যন্ত যে বিশেষ হাওড়া-দিঘা-হাওড়া এবং পাঁশকুড়া-দিঘা-পাঁশকুড়া ইএমইউ ট্রেন চালানোর জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, মিথ্যা কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ পূর্ব রেল কর্তৃক তাৎক্ষণিকভাবে তা বাতিল করা হয়েছে। বাংলার হিন্দুদের প্রতি এমন বিমাতৃসুলভ আচরণ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উত্তর মানুষ ঠিকই দেবেন আগামীতে।’

  • Link to this news (এই সময়)