• উড়ালপুল আজও হলো না, লেভেল ক্রসিংয়ের গেরোয় মর্মান্তিক মৃত্যু বেলদার বৃদ্ধের
    এই সময় | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • লেভেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ। দাঁড়িয়ে আছে টোটো। তার ভিতরে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন এক বৃদ্ধ। কতক্ষণে গেট খুলবে, অধীর অপেক্ষায় তাঁর ছেলে-বউমা। এমন পরিস্থিতিতে ক্রসিংয়েই ছুটে এসেছিলেন এক চিকিৎসক। তিনিও অসহায়, হাসপাতালে না নিয়ে গেলে কিছু করার নেই। লেভেল ক্রসিংটা পেরোলেই হয়। কিন্তু সেটা বন্ধ, যাচ্ছে মালগাড়ি। আর দেখতে দেখতেই ছেলের কাঁধে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বৃদ্ধ। রবিবার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায়। এই ঘটনা ফের একবার এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত উড়ালপুল নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

    বেলদার নবোদয়পল্লীর বাসিন্দা ছিলেন মনীন্দ্রনাথ ষড়ঙ্গী (৭৫)। রবিবার সকালে শৌচাগারে গিয়ে তিনি হঠাতই বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সেখানেই বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েছিলেন তিনি। বাবার এই অবস্থা দেখে একটি টোটো ডেকে তাঁকে নিয়ে বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর ছেলে ও বউমা। কিন্তু লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে আসতেই রেল গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেই সময় বুকে হাত চেপে কাতরাচ্ছিলেন মনীন্দ্রনাথ। তাঁকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বোলাচ্ছিলেন ছেলে মৃত্যুঞ্জয়। আর মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী দু’হাত দিয়ে শ্বশুরের বুকে পাম্প করছিলেন। সেই সময় পাশেই স্কুটার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বেলদার BMOH অর্থাৎ, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ আশিস মন্ডল। টোটোয় অসুস্থ মণীন্দ্রনাথকে দেখে তিনি ছুটে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বা চিকিৎসা সরঞ্জাম ছিল না। ফলে রেলগেট না ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না মণীন্দ্রনাথ ও তাঁর পরিবারের।

    ধীর গতির মালগাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পর রেলগেট ওঠে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মনীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পৌঁছন মৃত্যুঞ্জয় ও তাঁর স্ত্রী। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মণীন্দ্রনাথ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানান তাঁরা।

    মনীন্দ্রবাবুর প্রয়াণে ফের একবার বেলদা উড়ালপুল কবে হবে, সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। উড়ালপুল থাকলে মালগাড়ি যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। সেই ক্ষেত্রে হয়তো মণীন্দ্রনাথের মৃত্যুও এড়ানো যেত। এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসী। মৃত্যুঞ্জয় বলেছেন, ‘কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল।’ মণীন্দ্রনাথকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন স্থানীয় যুবক চন্দনকুমার নন্দ। তিনি বলেছেন, ‘এর আগেও একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। কেউ শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে পৌঁছতে পেরেছেন, আবার কারও তার আগেই মৃত্যু হয়েছে। আর কত কষ্ট-যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে বেলদাবাসীকে? ৫ বছর ধরে শুনে যাচ্ছি উড়ালপুল হবে। কবে হবে?’

  • Link to this news (এই সময়)