সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: নানা ভাষা, নানা মত। বিভিন্ন ধর্ম, বহু সংস্কৃতি। তবুও ভারতবাসী একসূত্রে গাঁথা, তা ফের প্রমাণিত। ভূস্বর্গে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে পুরুলিয়ার ঝালদার হোসেনডি জামা মসজিদ থেকে আওয়াজ উঠল, ‘হিন্দুস্থান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান মুর্দাবাদ!’ সেই সঙ্গে নমাজ পাঠের আগে ওই জঙ্গি হামলায় নিহত ঝালদা শহরের ওল্ড বাঘমুন্ডি রোডের বাসিন্দা আইবি অফিসার মনীশরঞ্জন মিশ্র-সহ মোট ২৬ জনের আত্মার শান্তি কামনায় নীরবতা পালন হয়। মসজিদে ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান মুর্দাবাদ’-এর পাশাপাশি উঠল ‘মণীশরঞ্জন জিন্দাবাদ, মণীশরঞ্জন অমর রহে’ স্লোগানও।
গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গিরা পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে বেছে বেছে হিন্দুদের নিশানা করেছে। তারপর থেকেই ধর্ম নিয়ে নানা আলোচনা শুরু। কিন্তু ভারত যে নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের দেশ, রবিবার তা-ই প্রমাণ করে দিল ঝালদার ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা প্রান্তিক এলাকা পুরুলিয়ার ঝালদা। ঝালদা শহর ছুঁয়ে রয়েছে বর্ধিষ্ণু তিনটি গ্রাম, হোসেনডি, বাগানডি, কাঁটাডি। সেই হুসেনডির জামা মসজিদে মোট ৫ বার নমাজ পাঠ হয়। দুপুরেই থাকে সবচেয়ে বেশি ভিড়। সেই দুপুরেই শোনা যায় পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান।
বহু শতক ধরে আসমুদ্রহিমাচলের বুকে একের পর এক আছড়ে পড়েছে হামলা। শক, হূণ, মোগল, পাঠান থেকে ব্রিটিশ। সাম্প্রতিকতম সংযোজন এই জঙ্গি। কিন্তু ভারতবাসী হাল ছাড়েনি। দেশের সাফল্যের মূল মন্ত্রই হল, একতা। তাই জঙ্গি দমনে মসজিদ থেকে সেই এককাট্টা হওয়ার আওয়াজ উঠছে। ওই মসজিদের ইমাম মহম্মদ আদিল হুসেন কাশমি বলেন, “কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা আমাদেরকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা চাই ভারত সরকার পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দিক। আমরা ভারতবাসী। একসূত্রে গাঁথা। সেই কারণেই আমরা মসজিদ থেকে আওয়াজ তুললাম, ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান মুর্দাবাদ।’ আমরা এই ঘটনার বিচার চাই। ইসলাম কখনও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। যারা জঙ্গি হয় তারা মুসলমান নয়।” প্রায় একই বক্তব্য জামা মসজিদ কমিটির তরফে শেখ হুসেন আহমেদের। তিনি বলেন, “আমরা নিহত মনীশরঞ্জনের পরিবারের পাশে রয়েছি। পুলওয়ামার ঘটনা যেমন ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল এই ঘটনা যেন তা না হয়। আমরা জঙ্গি দমন চাই।”