• পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় বিতানের স্ত্রীর জন্মের জোড়া শংসাপত্র! তদন্তে কী জানল পুরসভা?
    প্রতিদিন | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • কৃষ্ণকুমার দাস: আলিপুর আদালতের জাল ‘অর্ডার’ দেখিয়ে কলকাতা পুরসভা থেকে দু-দু’বার বার্থ সার্টিফিকেট জোগাড় করেন পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় (Pahalgam Terror Attack) নিহত বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী! প্রথমটি অনুযায়ী সিআইটি রোডের মেরিল্যান্ড নার্সিংহোমে জন্ম। দ্বিতীয়টি অনুযায়ী, মনোহরপুকুর রোডের এলিট নার্সিংহোমে জন্ম। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছিল, আলিপুর আদালতের এক্সিকিউটিভম্যাজিস্ট্রেটের ২০১৬ সালের নির্দেশ মোতাবেক (১২১৫/২০১৬ নং) দ্বিতীয় সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় আইনানুসারে এমন নির্দেশ পেতে হলে আবেদনকারীর বাবা বা মা যেকোনও একজনকে আদালতে আবেদন করতে হয়। কিন্তু তদন্ত করে পরে পুরসভা জেনেছে, ১২১৫/২০১৬ নং-এর নির্দেশনামার জন্য আবেদনকারী সোহিনীর পরিবারের কেউ ছিলেন না।

    আদালতের নথি বলছে, এক্সিকিউটিভম্যাজিস্ট্রেটের দুটি কোর্টে যে দু-জন আবেদন করেন, তাঁদের একজন মহম্মদ ইফতিকার খান, দ্বিতীয় কোর্টে আবেদনকারী ছিলেন বিজয় শেঠ। কলকাতা পুরসভার আইনজীবীরা শনিবার জানিয়েছেন, “সোহিনীর বাবা শান্তিরঞ্জন রায় ২০১২ সালে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে মারা গিয়েছেন। আর মা ভারতী রায় এখন পলাতক হয়ে নারায়ণগঞ্জেই আছেন। তিনিও কোর্টে আবেদন করেননি। পুরসভায় জমা নথির সঙ্গে আদালতের তথ্য মিলছে না।” স্বভাবতই ১২১৫/২০১৬ নম্বরের কোর্ট অর্ডারের ভিত্তিতে পুরসভা থেকে পাওয়া এলিট নার্সিংহোমে জন্ম বলে যে বার্থ সার্টিফিকেট সোহিনী পাসপোর্ট ও অন্যান্য দপ্তরে জমা দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভুয়ো।

    কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী তথা বিতানের দাদা বিভু অধিকারীর কথায়, “২০০১ সালে সিআইটি রোডের মেরিল্যান্ড নার্সিংহোমে নথির ভিত্তিতে ৩ মার্চ, ১৯৮৯ জন্ম বলে যে বার্থ সার্টিফিকেট সোহিনী জোগাড় করেছিলেন সেটিরও নথি ভুয়ো ছিল বলে আমার নিশ্চিত ধারণা।” উল্লেখ্য, এলিট নার্সিংহোমের তথ্য বলে যে বার্থ সার্টিফিকেট সোহিনী জমা করেছেন সেখানে জন্ম তারিখ ৫ মার্চ, ১৯৮৯। নেতাজিনগর থানা ২০২৩ সালের কেস নম্বর ৫৬-এর ভিত্তিতে কোর্টে যে চার্জশিট জমা করেছে, সেখানে সোহিনীর ঢাকা নারায়ণগঞ্জের ১৭৫ অধ্যক্ষ খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সড়কে জন্মস্থান বলে ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন’-এর নথি জমা দিয়েছে। সূত্রের খবর, গত ১৭ মার্চ সোহিনীর এই ভুয়ো কোর্ট অর্ডার ও বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে জমা পড়া একগুচ্ছ নথি ও অভিযোগের ভিত্তিতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা।

    পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam) জঙ্গিদের গুলিতে নিহতদের মামলায় তদন্ত করতে শনিবার কলকাতায় এসেছে এনআইএ টিম। সেই টিমের সদস্যরা প্রথমে বেহালার শখেরবাজারে নিহত সমীর গুহর বাড়িতে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে সমীরবাবুর স্ত্রী শবরী ও মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। পরে পাটুলির বৈষ্ণবঘাটায় সোহিনীর সঙ্গেও গিয়ে কথা বলেন এনআইএ অফিসাররা। প্রতিবেশীরা এদিন এনআইএ অফিসারদের উদ্দেশ্য করে বলেন, জঙ্গিদের গুলিতে বিতানের মৃত্যুর অপরাধীরা যেন কঠোরতম শাস্তি পায়। কিন্তু যার বয়ান নিতে এলেন, তাঁর আসল পরিচয় জেনেছেন কি? পাসপোর্ট জালিয়াতির জেরে আমেরিকার ভিসা বাতিল হওয়ায় দুবছর আগে ফ্লোরিডা থেকে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। প্রতিবেশীরা এনআইএ অফিসারদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়েছেন, জানেন কি এই সোহিনীর কাঁচরাপাড়ার ভুয়া ঠিকানার ভোটার আইডেনটি কার্ডও বাতিল করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন? যদিও তদন্তকারীরা কোনও মন্তব্য না করে এলাকা ছেড়েছেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)