ফিরে আসবে রফিকুল, ১৫ বছর ধরে দিন গুনছেন বৃদ্ধা সোনাভান
বর্তমান | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, দিনহাটা: দরজার দিকে চোখ মেলে বসে থাকা এক মায়ের প্রতীক্ষার যেন শেষ নেই। দিনহাটা মহকুমার সাবেক ছিটমহলের ছোট্ট গ্রাম পোয়াতুরকুঠিতে প্রায় ১৫ বছর ধরে ছেলের ফেরার আশায় লড়াই করে যাচ্ছেন বৃদ্ধা সোনাভান বিবি।
২০০৯ সালে রাজধানী দিল্লিতে শ্রমিকের কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁর একমাত্র ছেলে রফিকুল শেখ। পরিবারের সচ্ছ্বলতার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন রফিকুল। যাওয়ার কিছুদিন পর একবার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল, বলেছিলেন— ভালো আছি, কাজ খুঁজছি। তারপর থেকেই যোগাযোগের সুতো ছিঁড়ে যায়।
প্রথম দিকে আশায় বুক বাঁধতেন সোনাভান বিবি। ভাবতেন, হয়তো কোনও একদিন ফোন আসবে বা হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়বে রফিকুল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আশা রূপ নিয়েছে যন্ত্রণায়। ঘরের এক কোণে পুরনো এক বাঁধানো ফ্রেমে রফিকুলের ছবি ঝুলে আছে। প্রতিদিন সেই ছবির সামনে বসে প্রার্থনা করেন সোনাভান। দু’চোখে অগণিত প্রশ্ন নিয়ে বলেন, কি খেয়ে আছে, কোথায় আছে কিছুই জানি না... একটা খোঁজ যদি পেতাম ছেলেটার!
রফিকুলের বাবা মইনুদ্দিন শেখ বলেন, শুরুতে দিল্লিতে থাকা পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আত্মীয়পরিজন, পরিযায়ী শ্রমিক, যাঁকে পেরেছি ধরে ধরে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু কোথাও রফিকুলের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। থানায় ডায়েরিও করেছিলাম, কিন্তু কিছুই হয়নি।
পোয়াতুরকুঠির মতো প্রান্তিক গ্রামে বসবাসের ফলে প্রশাসনিক সহায়তাও খুব একটা জোটেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রফিকুলের পরিবার চেষ্টা করেও কোনও সরকারি হেল্পলাইন বা সংগঠনের সাহায্য পায়নি। আজও পরিবারটি আশা করে, যদি কোনওভাবে প্রশাসনিক স্তরে উদ্যোগ নেওয়া হয়, হয়তো ছেলের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
প্রতিটি সন্ধ্যায় গ্রামের মেঠোপথে তাকিয়ে থাকেন সোনাভান বিবি। প্রত্যেকটা টোকা, প্রত্যেকটা শব্দে তাঁর বুক ধড়ফড় করে ওঠে। হয়তো রফিকুল ফিরবে— এই ভাবনাতেই আজও বেঁচে আছেন তিনি। পোয়াতুরকুঠির নিঃসঙ্গ ঘরে এই প্রতীক্ষা কেবল একটি পরিবারের নয়, এ যেন হাজারো হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়ের পরিবারের অসীম অপেক্ষার প্রতীক। যে অপেক্ষা কখনও ফুরায় না, কেবল স্মৃতি আর আশা হয়ে বেঁচে থাকে। নিজস্ব চিত্র।