কিষেনজি ‘খুনে’র বদলা চেয়ে পোস্টার, মাওবাদীদের নামে লাল কালিতে লেখা, ত্রস্ত তালডাংরা ও ওন্দা
বর্তমান | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: রবিবার তালডাংরা ও ওন্দা থানা এলাকায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। এদিন সকালে তালডাংরা বাজার ও ওন্দার নাকাইজুড়ি এলাকায় একাধিক পোস্টার নজরে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটি, দেওয়ালে ওইসব পোস্টার সাঁটানো ছিল। খবর পেয়ে পুলিস গিয়ে পোস্টারগুলি সরিয়ে দেয়। যদিও তার আগেই ওইসব পোস্টারের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। লাল কালিতে লেখা পোস্টারে প্রয়াত মাওবাদী নেতা কিষাণজি সহ অন্যান্যদের মৃত্যুর বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও হুমকিতে বলা হয়েছে, এবার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের টার্গেট করা হবে, পাশাপাশি জল-জঙ্গল-জমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা যাবে না। ওইসব পোস্টারে ভোট বয়কটেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। পোস্টারের নীচের দিকে ইংরাজি ও বাংলায় ‘সিপিআই (মাওবাদী)’ লেখা রয়েছে। যদিও পোস্টার সাঁটানোর সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও যোগ নেই বলেই বাঁকুড়া জেলা পুলিসের তরফে দাবি করা হয়েছে।
বাঁকুড়ার পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, জেলায় মাওবাদীদের কোনও অস্তিত্ব নেই। স্থানীয় স্তরে কিছু মানুষ গুজব ছড়ানোর জন্য ওই ধরনের পোস্টার সাঁটিয়ে থাকে। কেউ কেউ মদ খেয়েও ওই কাজ করে থাকে। অতীতে এই জেলায় পোস্টার সাঁটানোর অভিযোগে কয়েকজনকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। নিছক মজা করার জন্য তারা পোস্টার সাঁটিয়েছিল বলে পুলিসি জেরায় ধৃতরা স্বীকার করেছিল। ওন্দা ও তালডাংরাতেও ওই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান। পোস্টার সাঁটানোর পিছনে কে বা কারা রয়েছে, তা আমরা জানার চেষ্টা করছি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট মাসে রাইপুর থানা এলাকার মটগোদা ও সারগাড়ি এলাকায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার উদ্ধার হয়েছিল। লাল কালিতে লেখা দু’টি পোস্টার দেওয়ালে সাঁটানো অবস্থায় লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওইসব পোস্টার সরিয়ে দেয়। পোস্টারগুলিতে ভুলে ভরা বানানে লেখা ছিল, ‘আমাদের পশ্চিমবঙ্গে যে দুর্নীতি, তা আমরা সহ্য করতে পারছি না। তাই আমরা আবার লড়াইয়ে নেমেছি।’ যদিও পোস্টার কাণ্ডের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ থাকার বিষয়টি তখনও বাঁকুড়া জেলা পুলিস উড়িয়ে দিয়েছিল। একসময় জঙ্গলমহলের থানাগুলিতে মাঝেমধ্যেই মাওবাদীদের নামে পোস্টার পড়ত। তবে মাঝে কয়েকবছর তা কমে যায়। কিন্তু বর্তমানে ফের পোস্টার সাঁটানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পোস্টার কাণ্ডের পিছনে যারাই থাকুক না কেনও, অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
তালডাংরার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী বলেন, এদিন সকালে পোস্টারগুলি নজরে পড়ে। আমাদের এলাকায় অতীতে মাওবাদীদের গতিবিধি নজরে পড়েনি। এর পিছনে রাজনৈতিক রেষারেষি থাকতে পারে বলে আমাদের অনুমান। কারণ ঠিকাদারি কারবার নিয়ে জঙ্গলমহলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের লোকজনের মধ্যে বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশের দৌরাত্মেও সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এসব ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাওবাদীদের নামে পোস্টারের মাধ্যমে কেউ করে থাকতে পারে।