মাইনে পেলেন সাফাই কর্মীরা অন্যান্য অস্থায়ীদের বেতনে টান
বর্তমান | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: বেতন না মেলায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন সাফাইকর্মীরা। দীর্ঘ প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধর্মঘট শেষে অবশেষে সাফাই কর্মীদের বেতন দিতে পেরেছে পুরুলিয়া পুরসভা। কিন্তু, তাতেও দুশ্চিন্তা দূর হল না। এপ্রিল শেষ হতে চলল। পরের মাসে বেতন কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে ঘুম উবেছে পুরুলিয়া পুরসভার।
পুরসভার চেয়ারম্যান নব্যেন্দু মাহালি বলেন, বহু কষ্টে বেতন দিতে পেরেছি সাফাইকর্মীদের। এখনও অন্যান্য বিভাগের অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। এপ্রিলও শেষ হতে চলল। পরের মাসে বেতন কীভাবে দেব, সেটাই এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাফাই, জল, বিদ্যুৎ সহ বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে পুরসভার মোট অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ১৬০০। এরমধ্যে সাফাইবিভাগেই রয়েছেন প্রায় ৯৫০জন। অস্থায়ী কর্মীদের প্রতি মাসেই বেতন বকেয়া হয়ে যায়। তিন মাসের বেতন বকেয়া হলে এক মাসের বেতন দিতে পারে পুরসভা। শ্রমিকরা ধর্মঘট ডাকে। হাট, বাজার, রাস্তাঘাটের আবর্জনা পরিষ্কার হয় না। বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ বন্ধ থাকে। পুরসভার উপর মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থায়ী কর্মীদের প্রতি মাসে বেতন দিতে পুরসভার খরচ হয় ৮০লক্ষ টাকা। যদিও পুরসভার দাবি, পুরসভার প্রতি মাসে সেই তুলনায় আয় হয় না। চেয়ারম্যান বলেন, আয় বাড়ানোর সবরকম চেষ্টা আমরা করছি। সাফাই কর্মীদের বেতন দিতে যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য শহরের প্রত্যেক বাসিন্দা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে সাফাই কর আদায় শুরু হয়েছিল। কিন্তু, বহু কাউন্সিলারের সদিচ্ছার অভাবে সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে।
পুরুলিয়া শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রদীপ ডাগা বলেন, বহু কাউন্সিলার শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতি করছেন। নিজের এলাকার দিকে নজর রাখছেন না। সবাইকে নিজেদের কাজের ব্যাপারে আরও বেশি করে ওয়াকিবহাল হতে হবে। সেইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, বহু বছর ধরে পুরুলিয়া পুরসভার বাসিন্দাদের সম্পত্তি কর মূল্যায়ন হয়নি। মিউটেশন কম হচ্ছে। ঠিকমতো ট্যাক্স আদায় হচ্ছে না। বহু বাসিন্দা বছরের পর বছর ধরে পুরসভাকে কর দিচ্ছে না। অনেকে আবার রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিংকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাবহার করে পুরসভাকে কর ফাঁকি দিচ্ছে। পুরসভার আয় যতটা হওয়ার কথা হচ্ছে না। কীভাবে আয় বাড়ানো যায়, সেই নিয়ে চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দিয়েছি।
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, পুরসভার এত কর্মীরও প্রয়োজনই নেই। কিন্তু কাউন্সিলারদের ঠেলায় এত বেশি কর্মী নিয়োগে বাধ্য হয়েছে পুরসভা। তারমধ্যে অধিকাংশ কর্মীই অকাজের। তাঁদের চিহ্নিত করে বের করতে পারলে পুরসভার বোঝা অনেকটা হালকা হবে। পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার এইসব জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে আজ, সোমবার বোর্ড মিটিংয়ে বসছেন কাউন্সিলাররা। বিজেপির সহ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, যতই মিটিং করুক না কেন, কাউন্সিলাররা যতদিন না পুরসভা থেকে ঘুরপথে নিজেদের মোট টাকা বেতন নেওয়া বন্ধ করবেন, ততদিন সমস্যার সমাধান হবে না।