• যুবকের জঙ্গি-যোগের ভুয়ো পোস্ট বিজেপির, তদন্তে এসে খালি হাতে ফিরল এনআইএ
    বর্তমান | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরের এক যুবকের সঙ্গে জঙ্গিযোগ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এনিয়ে বাজার গরম করার চেষ্টা করে বিজেপি। খোদ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি(এনআইএ) বিজেপির ‘ভুয়ো’ পোস্টের তদন্ত করতে তড়িঘড়ি ছুটে আসে। রাতভর এনআইএ’র সদস্যরা জঙ্গি সন্দেহে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু, ভোরের আলো ফুটতেই তাঁদের ফিরতে হল খালি হাতেই।‌ শুধুমাত্র ওই যুবকের মোবাইলটি ফরেন্সিক টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এভাবে ফিরে যাওয়ায় বিজেপির নাক কাটা গেল। ভোটের আগে ‘ভুয়ো’ পোস্ট করে বাজার গরম করার বিজেপির ‘অভিসন্ধি’তে জল ঢেলে দিল খোদ এনআইএ। অনেকেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই অতি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

    কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, পুলিসের তরফে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এনআইএ’র সদস্যরাও এসেছিলেন। কিন্তু, ওই যুবকের সঙ্গে জঙ্গিযোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবু আমরা তদন্ত করছি। কিন্তু, কোনও মামলা হয়নি। 

    শনিবার কৃষ্ণনগরের ভাণ্ডারখোলা এলাকার এক যুবকের বেশকিছু ছবি ও তার সমাজ মাধ্যমের পোস্ট বিজেপির তরফে ভাইরাল করা হয়। সেই ছবিতে দেখা যায়, একে-৪৭ নিয়ে পাহাড়ী এলাকায় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে ‘পাকিস্তানি ভাইয়া’ বলে সম্বোধন করছে কৃষ্ণনগরের ওই যুবক। বন্দুকধারী ওই ব্যক্তির সঙ্গে সেলফিও রয়েছে ওই মুসলিম যুবকের। পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, এই ছবি প্রকাশ্যে আসায় জেলাজুড়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করে কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার পুলিস। তদন্তে দেখা যায়, বিজেপি প্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবক গত ৩ জানুয়ারি চাপড়ার এক এজেন্টের মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছিল। তারপর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একদিন পাকিস্তানের দুই ব্যক্তি ওই যুবককে নানাভাবে সাহায্য করে। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। স্থানীয় সুপার মার্কেটে ঘুরতে গিয়ে তারা সেলফিও তোলে। ওই দুই ব্যক্তির পরিচয়ও জানতে পারে পুলিস। জানা যায়, তারা পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন এলাকায় পুলিস হিসেবে কাজ করত। কিন্তু, বর্তমানে সৌদি আরবে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। পুলিসে কর্মরত অবস্থায় বেশ কিছু ছবি তারা কৃষ্ণনগরের ওই যুবককে দেয়। গত ১১জানুয়ারি ভাণ্ডারখোলার ওই যুবক দেশে ফিরে আসে। গত ২৯ জানুয়ারি সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় সে শেয়ার করে। সম্প্রতি বিজেপির তরফে সেই সমস্ত পোস্টের স্ক্রিনশট ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। তার ভিত্তিতেই ছুটে আসে এনআইএ। কিন্তু ফিরতে হল খালি হাতে। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, একজন ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের ছবি শেয়ার করছে। এটা আইনত অপরাধ। কেন এই ছবি সে শেয়ার করল, তার প্রকৃত তদন্ত হোক। তদন্ত করে এনআইএ’র খালি হাতে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে ওই বিজেপি নেতা বলেন, তাহলে সেটা আলাদা ব্যাপার।

    কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু, মানুষের কাছে পৌঁছনোর মতো কিছু নেই বিজেপির। তাই এসব করছে। আর কেন্দ্রীয় সংস্থা তো বিজেপির কথায় ওঠে বসে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির একটা পোস্টের জন্য এনআইএ’কে ছুটে আসতে হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)