প্রতি ট্রিপে ৫০ লক্ষ আয়, দীঘা ও মন্দারমণিতে সাকসেস পার্টি
বর্তমান | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ‘সাহেবি চোর’ বোধ হয় একেই বলে! বিলাসবহুল জীবনযাত্রা। কর্ণাটক থেকে পশ্চিমবঙ্গে কেপমারি করতে আসত বিমানে চেপে। থাকত হোটেল ভাড়া নিয়ে। প্রত্যেক ট্রিপে তারা কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা কামাই করত। কখনও কখনও রোজগার হতো প্রায় কোটি টাকা। তবে ৫০ লক্ষের ‘টাগের্ট’ পূরণ হলেই তারা ‘সাকসেস পার্টি’ করতে চলে যেত দীঘা বা মন্দারমণিতে! দেদার ফুর্তির পর তারা আবার বিমানে চেপে ফিরে যেত কর্ণাটক। কুখ্যাত বিদর গ্যাংয়ের ধৃত সদস্যদের জেরা করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল পুলিসের হাতে। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, কলকাতায় তাদের এজেন্ট রয়েছে, যারা সবরকম সহযোগিতা করে তাদের। আপাতত সেই এজেন্টদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিস।
কলকাতা ও সংলগ্ন শহরাঞ্চল সহ বাংলার বিভিন্ন এলাকার প্রবীণ মানুষজনকেই মূলত এই গ্যাং টার্গেট করত। প্রতিবার একই কৌশলে কেপমারি হচ্ছিল। পুলিস পরিচয় দিয়ে তারা শুধুমাত্র সোনার গয়না কেপমারি করত। তাই তদন্তকারীরা বুঝতে পারছিলেন, একটাই চক্র একের পর এক কেপমারি করে যাচ্ছে। রাজ্যজুড়ে ৫০টির বেশি এই ধরনের অভিযোগ জমা পড়ে গত কয়েকমাসে। এরকম এক অভিযোগের তদন্তে নেমে বাগুইআটি থানার পুলিস জানতে পারে, চক্রটি চালাচ্ছে কর্ণাটকের বিদর গ্যাংয়ের সদস্যরা। আতস কাচের তলায় রাখা হয়েছিল তাদের। দিন চারেক আগে মহারাষ্ট্রের লাটুর থেকে বিদর গ্যাংয়ের দুই কুখ্যাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে বাগুইআটি থানা। ধৃত তাকি ইউসুফ আলি ও হাসনি নাসের হোসেনকে ট্রানজিট রিমান্ডে বিধাননগরে নিয়ে আসা হয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানিয়েছে, কর্ণাটকের যে কোনও এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে চেপে তারা প্রথমে কলকাতায় আসত। বিমান থেকে নেমে সোজা হোটেলে উঠত। প্রত্যেক ‘অভিযানে’ তারা কমপক্ষে পাঁচটি ‘অপারেশন’ করত। কখনও কখনও ১০টি। এক-একটি ক্ষেত্রে তারা ১০-১২ ভরি সোনার গয়না লুট করত। অর্থাৎ, পাঁচটি অপারেশন সফল হলে তাদের হাতে চলে আসত ৫০-৬০ ভরি সোনার গয়না। যার বর্তমান বাজারদর প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। রাস্তায় যেসব বয়স্ক পুরুষ বা মহিলা হাতে একাধিক আংটি, গলায় সোনার হার, হাতে সোনার বালা পরে বেরন, তাঁদেরকেই ‘শিকার’ করত বিদর গ্যাং।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, ৫০ লক্ষ টাকার গয়না লুট হলেই তারা দীঘা-মন্দারমণি চলে যেত। সেখানে হত ‘সাকসেস পার্টি’। তারপর কর্ণাটকে ফিরে যেত বিমানেই। পরে আবার এসে একই কৌশলে চলত কেপমারি। পুলিস জানতে পেরেছে, ভুয়ো নম্বর প্লেটযুক্ত বাইকে চেপে ‘অপারেশন’-এ বেরত তারা। ‘কাজ’ মিটে যাওয়ার পর তারা বাইকেই পালাত। কিছুটা যাওয়ার পর সেই বাইক নিয়ে চলে যেত তাদের এজেন্ট। তারা গাড়িতে উঠে পৌঁছে যেত নিরাপদ আস্তানায়। এ বিষয়ে আরও জানতে ওই এজেন্টদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিস।