আয়ূষ চিকিৎসা করতে, ওষুধ দিতে পারছেন না আয়ুর্বেদিক ডাক্তাররাই!
বর্তমান | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আয়ুর্বেদিক ডাক্তার, অথচ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাই করতে পারছেন না। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, অথচ আয়ুর্বেদিক ওষুধই লিখতে পারছেন না। ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’ পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনেও রোগী দেখতে পারছেন না তাঁরা।
তবে ওষুধই কীই-বা লিখবেন। কোনও আয়ুর্বেদিক ওষুধের সরবরাহই যে নেই! এমন বিচিত্র অবস্থা রাজ্যজুড়ে চারশোর বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তা সে উত্তরবঙ্গের সাতপুকুরিয়া, ফালাকাটা, কেন্দুয়া বা হবিবপুর হোক অথবা দক্ষিণবঙ্গের গলসি, দেশপ্রাণ, ময়না বা বাগদা। সর্বত্র একই অবস্থা। এই সমস্ত সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারেরই ইনচার্জ বা কমিউনিটি হেলথ অফিসার (সিএইচও) হিসেবে কাজ করছেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? আয়ুর্বেদ পাশ সিএইচওদের অভিযোগ, বাধ সাধছেন ব্লক এবং জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা। তাঁদের নাকি সাফ কথা, আমাদের হাতে স্বাস্থ্যদপ্তরের কোনও নির্দেশ নেই। তাহলে কোন যুক্তিতে আপনাদের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করার অনুমতি দেব? সিএইচওদের পাল্টা যুক্তি, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের সর্বভারতীয় মিশন ডিরেক্টর যেখানে জানিয়ে দিয়েছেন অন্যান্য দায়দায়িত্বের পাশাপাশি সিএইচওদের আয়ুর্বেদিক ওষুধ লেখার অনুমতি দিক রাজ্যগুলি। সেখানে রাজ্যের নির্দেশের জন্য কেন বসে আছেন স্বাস্থ্যকর্তারা? একাধিক সিএইচ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলছেন, ডাক্তারি পাশ করেছি। অথচ ডাক্তারিই করতে পারছি না। এদিকে আমরা রোগী দেখলে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার রোগীর চাপ কমে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘বিষয়টি দেখছি।’ স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, রাজ্যজুড়ে ১৬,৪০০টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। এগুলির মধ্যে ১৬ হাজার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা করেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সরা। তাঁরাই সেখানকার সিএইচও। ৪০০টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বিএএমএস পাশ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা। কমবেশি ৫ থেকে ১০ হাজার জনসংখ্যা বা চার-পাঁচটি গ্রামপিছু এক-একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এগুলি প্রত্যন্ত গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মায়েদের চেক আপ, গ্রামবাসীদের সুগার-প্রেশার মনিটরিং, সমস্ত জাতীয় এবং রাজ্য স্বাস্থ্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন—সবটাই হয় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র মারফত। আশা, এএনএম’দের পরিচালনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকল্প রূপায়ণ—সিএইচদের কাজের শেষ নেই। কিন্তু চিকিৎসকের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ যে ডাক্তারি, সেটাই করতে পারছেন না তাঁরা।
এ নিয়ে ২৫ এপ্রিল ওয়েস্ট বেঙ্গল সিএইচও (আয়ুষ) অ্যাসোসিয়েশন স্বাস্থ্যভবনে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে। কোনও লাভ হয়নি। এক সিএইচও বলেন, শুধু আয়ুর্বেদিক ওষুধই নয়, রাজ্য আমাদের ৩০টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ লেখার অনুমতি দিয়েছিল। আমরা সেটাও করতে পারছি কই!