নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘মুম্বই পুলিসের ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে বলছি। আপনার নামে আসা একটি পার্সেলে মাদক মিলেছে। আপনাকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হল।’ আচমকা এমন ফোন পেয়ে ঘাবড়ে যান পাইকপাড়ার বাসিন্দা এক বৃদ্ধা। ‘অ্যারেস্ট’ হয়েছেন শুনে ফোনে জানতে চান, ‘এখন আমাকে কী করতে হবে?’ তাঁকে বলা হয়, ৬০ লক্ষ টাকা দিলে মিটমাট হয়ে যাবে। সেই মতো নিজের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে ৬০ লক্ষ টাকা তুলে একলপ্তে তিনি পাঠিয়ে দেন নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্টে। তারপর আরও টাকা দাবি করা হয়। ততক্ষণে নিজের ভুল বুঝতে পেরে চিৎপুর থানায় অভিযোগ করেন বৃদ্ধা। তদন্তে নেমে পুলিস খোয়া যাওয়া টাকার একাংশ ‘ব্লক’ করতে পেরেছে। ওই টাকা অন্য কোনও অ্যকাউন্টে সরানো যাবে না।
৭০ ছুঁইছুঁই এক মহিলাকে কীভবে ফাঁদে ফেলল প্রতারকরা? জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে দুপুরবেলা মুম্বই পুলিসের অফিসার পরিচয় দিয়ে অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে বৃদ্ধার মোবাইলে। ‘অফিসার’ বৃদ্ধাকে জানায়, বিদেশে থেকে তাঁর নামে একটি পার্সেল এসেছে। সত্যতা যাচাই করতে তাঁর আধার নম্বর চাওয়া হয়। বৃদ্ধা আধারের তথ্য দিয়ে দিলে প্রতারক জানায়, পার্সেলে থাকা আধার নম্বরের সঙ্গে তাঁর নম্বর মিলে গিয়েছে। ওই পার্সেল পরীক্ষা করে নিষিদ্ধ মাদক মিলেছে। এমনকী, তাঁর নামে বেশ কিছু বেআইনি লেনদেনের হদিশ মিলেছে বলে জানায় প্রতারক। এরপর কল ‘ট্রান্সফার’ করা হয় অন্য একজনের কাছে। সেখান থেকে বলা হয়, বৃদ্ধার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। তাঁর মোবাইলে একটি ভুয়ো নথিও পাঠানো হয়। বড় বিপদে পড়ে গিয়েছেন ভেবে বৃদ্ধা যখন দিশাহারা, তখন তাঁকে ভিডিও কলে আসতে বলে জালিয়াতরা। ভিডিও কল করে বৃদ্ধা দেখেন, পুলিসের পোশাক পরে একজন বসে রয়েছে। সেই ব্যক্তি বলে, ‘আপনাকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হয়েছে।’ গ্রেপ্তারির কথা শুনে রীতিমতো ভয় পেয়ে যান। বাঁচার উপায় বাতলে দেয় প্রতারকরাই! তাদের দেওয়া অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালেই মামলা তুলে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। গ্রেপ্তারির হাত থেকে বাঁচতে বাইরে থাকা সন্তানদের কিছু না জানিয়ে তিনি নিজে ব্যাঙ্কে পৌঁছে যান। ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে সেখান থেকে ৬০ লক্ষ টাকা তুলে জালিয়াতদের দেওয়া অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। তারপরেও টাকার জন্য ফোন আসায় বৃদ্ধার সম্বিৎ ফেরে। ফের ব্যাঙ্কে ছুটে যান টাকা ‘ট্রান্সফার’ আটকাতে। কিন্তু ততক্ষণে পুরো টাকাই বেরিয়ে গিয়েছে। এরপর তিনি চিৎপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। যে অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে, দ্রুত তার তথ্য বের করা হয়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, একাধিক অ্যাকাউন্টে টাকা সরানো হয়ে গিয়েছে। তবে কিছু টাকা ওই অ্যকাউন্টে রয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সেই টাকা ‘ব্লক’ করা হয়। অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে অভিযুক্তদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিস। প্রসঙ্গত, ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ বলে কিছু হয় না—এই মর্মে ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছে পুলিস। এখন কাউকে ফোন করলেই আগে এ বিষয়ে স্বয়ংক্রিয় সতর্কবার্তা শুনতে হয়। তারপরও যে আম জনতার একাংশের হুঁশ ফেরেনি, এই ঘটনা তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।