এই সময়: দিঘায় জগন্নাথ ধাম উদ্বোধন নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতা তুঙ্গে। আগামী বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সেই ধামের উদ্বোধন। কিন্তু সেখানে কারা ঢুকতে পারবেন, আর কারা পারবেন না, তা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বিতর্ক তৈরি করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তাঁর সাফ কথা, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলেই দিঘায় ওই মন্দির তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। তাই পুরীর মন্দিরে প্রবেশের বিধিনিষেধ দিঘাতেও লাগু করতে হবে।
বুধবার দিঘার জগন্নাথ ধামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। কিন্তু তার আগেই রবিবার নন্দীগ্রামে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ বিষয়ে সুর চড়ান শুভেন্দু। তাঁর দাবি, ‘পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে হিন্দু ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ। বুধবার দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দিন যদি কোনও অহিন্দু মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করেন তাঁর ছবি মার্ক করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করব। অহিন্দু যাঁরা আমন্ত্রণ পেয়েছেন, তাঁরা কিন্তু সাবধান!’ শুভেন্দুর এই হুঁশিয়ারির জবাব তৃণমূল অবশ্য কড়া ভাষায় দিয়েছে। তারা মনে করছে, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের লক্ষ্যেই এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
দিঘায় জগন্নাথ ধাম তৈরির সময়ে বিভিন্ন দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তিনি শুভেন্দুকে বিঁধে বলেন, ‘দিঘায় জগন্নাথ দেবের কাছে সারা পৃথিবীর মানুষ আসবেন। এটাই ভারতবর্ষ। শুভেন্দুবাবুরা এই ভারতবর্ষকে মানতে চান না। তাঁরা শুধু বিভেদের কথা বলেন।
আমাদের রাজ্যের বিরোধী দলনেতার মুখে হিন্দু–মুসলমান ছাড়া আর কোনও কথা শোনা যায় না। আসলে শুভেন্দু অধিকারী বাংলায় তীব্র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তৈরি করে ভোটে জেতার কথা ভাবছেন। তাঁর এই স্বপ্ন কোনওদিন পূরণ হবে না।’ তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারও এ বিষয়ে শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। শুভেন্দু বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিরোধ তৈরি করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন।’
বাংলার বিজেপি নেতারা শুভেন্দুর এ দিনের হুঁশিয়ারির উপর মন্তব্য করতে চাননি। তবে বিজেপির একাংশের প্রশ্ন, ধর্ম নিয়ে এতটা ফ্রন্টফুটে খেলা কি ঠিক হচ্ছে? এক প্রবীণ পদ্ম নেতার কথায়, ‘আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরানো। কিন্তু শুভেন্দু যে ভাবে হিন্দু–মুসলমান শুরু করেছেন তাতে মুসলিম ভোট আরও বেশি করে তৃণমূলের দিকে যাবে। আর হিন্দু ভোট তো কখনই বাংলায় এককাট্টা হয় না। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশ নিয়ে এ দিন শুভেন্দু যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি।’
তবে শুধু হুঁশিয়ারি–ই নয়, রাজ্য সরকার নির্মিত জগন্নাথ ধাম নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও এ দিন তুলছেন শুভেন্দু। জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য তাঁকে সরকারি আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই আমন্ত্রণপত্রের ছবি পোস্ট করে শুভেন্দু জানিয়েছেন, তাঁর কিছু প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্নগুলির সদুত্তর পেলে তিনি সরকারি আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন কি না, ভেবে দেখবেন।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতার প্রথম প্রশ্ন, ‘টেন্ডার নথি অনুযায়ী দিঘায় জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। অথচ আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে, প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের কথা। দিঘায় কি কোনও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন হচ্ছে, নাকি জগন্নাথ মন্দিরের?’ শুভেন্দুর পরের প্রশ্ন, ‘যেহেতু হিডকোর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে তাই এই প্রতিষ্ঠানটি–ই কি জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে?’
তাঁর তৃতীয় প্রশ্ন, ‘বর্তমানে হিডকোর চেয়ারম্যান কে? হিডকোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এখনও ফিরহাদ হাকিমের নাম চেয়ারম্যান হিসেবে আছে।’ এই সূত্রেই বিরোধী দলনেতার পরের প্রশ্ন, ‘যদি ফিরহাদকে সরানো হয়ে থাকে, তবে হিডকোর ওয়েবসাইটে কেন এখনও তাঁর নাম? যদি তাঁকে সরানো না হয়ে থাকে তবে জগন্নাথ মন্দিরের সঙ্গে ফিরহাদের কী যোগসূত্র?’
শুভেন্দুর প্রশ্নমালা শুনে তৃণমূলের প্রথমসারির এক নেতার খোঁচা, ‘যখন কেউ রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েন, তখন–ই তাঁর মনে এ সব প্রশ্ন আসে। ২০১৯–এ জগন্নাথ ধাম তৈরির জমি খুঁজতে তিনিও তো মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সঙ্গে দিঘায় হাজির ছিলেন। কই তখন তো শুভেন্দু কোনও প্রশ্ন তোলেননি?’