• ভাতার পরেও স্কুলে যাবেন না শিক্ষাকর্মীরা, সমস্যায় স্কুলগুলি
    এই সময় | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা ভাতা পেলেও স্কুলে যাবেন না। কারণ তাঁরা মনে করছেন, স্কুলে গেলে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অবমাননা করা হবে। ফলে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ‘মানবিক কারণে’ চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপ সি–কে ২০ হাজার এবং গ্রুপ ডি–কে ২৫ হাজার টাকা ভাতার ঘোষণা করলেও স্কুলগুলির সমস্যা থেকেই গেল।

    স্কুলে স্কুলে এখন শিক্ষাকর্মীদের অভাব এতটাই যে দরজা‍ খোলা, ঘণ্টা দেওয়ার কাজ করার লোক নেই। অনেক স্কুলে প্রধান শিক্ষকদের সেই কাজ করতে হচ্ছে। সরকারি নানা সামাজিক প্রকল্প যেমন কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, স্কলারশিপ দেওয়ার প্রশাসনিক কাজও থমকে গিয়েছে।

    এই পরিস্থিতিতে কোন উপায়ে সেই সমস্যা থেকে স্কুলগুলি বেরিয়ে আসবে তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তেমনই কীভাবে এই ভাতা চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের হাতে পৌঁছবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, এ বিষয়ে যা করার শ্রম দপ্তর করবে। শিক্ষা দপ্তরের এতে কোনও ভূমিকা থাকবে না।

    এ দিকে সল্টলেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসের ভিতরে লাগাতার অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন চারজন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মী। বাইরেও অবস্থান চলছে। অনশনকারী চাকরিহারা শিক্ষাকর্মী সুজয় সর্দার বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি যোগ্য–অযোগ্য তালিকা প্রকাশ। সেটা যতক্ষণ না মানা হচ্ছে আমরা অনশন বা অবস্থান থেকে উঠছি না।’ ভাতার পরে কি তাঁরা স্কুলে যাবেন?

    সুজয়ের সাফ জবাব, ‘কোনও ভাবেই আমরা স্কুলে যেতে পারি না। কারণ তা করলে আদালত অবমাননা হবে।’ ফলে জটিলতা থেকেই গিয়েছে। এ দিকে কী ভাবে স্কুলগুলিকে সামাল দেওয়া হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না প্রধান শিক্ষকরা। অ্যাডভান্স সোসাইটি হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেস–এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘স্কুলগুলি শিক্ষাকর্মীর অভাবে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ছে। অনেক স্কুলেই ক্লার্ক এবং গ্রুপ ডি দুজনের চাকরি গিয়েছে। ফলে নানা সরকারি প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে। স্কুলের দরজা খোলারও লোক নেই। এই অবস্থায় ভাতা যদি প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে আমাদেরও বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।’

    কোন পদ্ধতিতে ভাতা পৌঁছবে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের কাছে তা রবিবার রাত পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। অনেক প্রধান শিক্ষক মনে করছেন, সরাসরি এই ভাতা চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকলে সরকার আদালত অবমাননার মধ্যে পড়তে পারে।

    তাহলে কি স্কুলের সহায়ক ফান্ডের মাধ্যমেই এই ভাতা দেওয়া হবে? শিক্ষাকর্মীরা যদি স্কুলে ফেরেন তাহলে কি তাঁদের জন্য আলাদা উপস্থিতির খাতা রাখতে হবে? পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্রের কথায়, ‘সরকার এই ভাতা দেওয়ার মাধ্যমে আসলে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদেরই আরও একবার বিপদে ফেললেন। বরং সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে এর সুরাহা তাড়াতাড়ি করলে ভালো হতো।’

    এ দিকে, আজ সোমবার দুপুরে ওএমআরে গোলমাল থাকা এবং শিক্ষাদপ্তরের যোগ্যদের তালিকায় নাম না থাকা শিক্ষক শিক্ষাকর্মীরা হাজরা মোড়ে জমায়েত করে কালীঘাট পর্যন্ত মিছিল করবেন বলে জানিয়েছেন। ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকদের অভিযোগ, এঁরা ‘অযোগ্য’। সেই ‘অযোগ্য’রা অবশ্য গত কয়েকদিন ধরেই এসএসসি ভবনের সামনে ধর্না চালাচ্ছেন।

  • Link to this news (এই সময়)