• নিয়ন্ত্রণ থাকবে ঠিকাদারদের হাতে, কাজ হারাবেন কুলিরা?
    এই সময় | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল

    ভাগলপুর থেকে সরস্বতীকে দেখতে এসেছেন হবু পাত্র ও তাঁর বাবা। তাঁদের সঙ্গে ভারী সুটকেস, তবু স্টেশনে কোনও কুলিকে তাঁরা পেলেন না। শেষমেশ স্টেশনে বসে থাকা, সরস্বতীরই ভালোবাসার মানুষ কেদারকে কুলি বলে ভুল করে তাঁকে দিয়ে মালপত্র বওয়ালেন বাবা–ছেলে।

    তরুণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’ ছবিতে ওই স্টেশনটি ছোট (আসলে শিমুলতলা স্টেশন), সম্ভবত সেই কারণেই কুলির সংখ্যা বেশি ছিল না। তবে এখন বাস্তবে দেশ জুড়ে বহু স্টেশনেই রেলের সরাসরি নিযুক্ত, লাল পোশাক পরা সেই চিরপরিচিত কুলিরা আর তেমন থাকবেন না— এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

    রেল সূত্রের খবর, স্টেশনগুলো অত্যাধুনিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুলিদের ব্যবস্থাটা দেওয়া হচ্ছে একাধিক ঠিকাদার সংস্থার হাতে। ‘কুলি অ্যাপ’–এর মাধ্যমে ঠিকাদাররা এ বার থেকে ওই কুলিদের নিয়োগ ও তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করবেন। একই সঙ্গে ঠিকাদার সংস্থাগুলো বিভিন্ন স্টেশনে অনেক বেশি সংখ্যায় ব্যাটারি চালিত গাড়ি রাখবে যাত্রীদের মালপত্র বওয়ার জন্য।

    তার ফলে এখন কাজ করা কুলিদের ৭০ শতাংশ কাজ হারাবেন বলে কুলিদের একটি সর্বভারতীয় সংগঠন আশঙ্কা করছে। রেলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আসানসোল, হাওড়া ডিভিশন–সহ দেশের বিভিন্ন স্টেশনের কুলিরা মিলে তৈরি করেছেন ‘রাষ্ট্রীয় কুলিমোর্চা’ নামে একটি সর্বভারতীয় সংগঠন।

    ওই সংগঠনের তরফে ২৫ এপ্রিল বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। তার পর তাঁরা বিভিন্ন স্টেশন ম্যানেজারের মাধ্যমে রেলমন্ত্রী ও রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে কয়েক দফা দাবি সম্বলিত চিঠি পাঠিয়েছেন বলে সংগঠনের কোঅর্ডিনেটর রাম সুরেশ যাদব জানান।

    কুলিদের ওই সংগঠনের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে ইতিমধ্যেই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ায় সেখানকার কুলিরা আন্দোলন করেন এবং তার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রেলমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় কুলিমোর্চা। তাদের দাবি, ঠিকাদার সংস্থার হাতে কুলিদের দেওয়া হয়েছে ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে জ়োনের একটি স্টেশনেও। রেলের একটি সূত্রের খবর, নতুন ব্যবস্থায় কুলিদের কিছু সমস্যা হবেই, সেই সমস্যার মোকাবিলা কী ভাবে করা যায়, রেলের কর্তারা সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন।

    যুগ যুগ ধরে কুলিদের নিয়ন্ত্রক ও নিয়োগকর্তা রেল। কুলিরা রেলের পাশ ও পোশাক পান। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়েদের রেলের স্কুলে পড়ানো এবং নিজের ও পরিবারের লোকজনকে রেল হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা করানোর সুবিধেও কুলিরা পেতেন। তবে আসানসোলে বেশ কিছু দিন যাবৎ তাঁরা রেলের হাসপাতালে চিকিৎসা এবং রেলের স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন না বলে আসানসোলে রাষ্ট্রীয় কুলিমোর্চার নেতৃত্বে থাকা সদস্য সঞ্জয় পাসোয়ান জানিয়েছেন।

    তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে রেলের পার্সোনেল বিভাগের আধিকারিকদের বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’ সঞ্জয়ের সাফ কথা, ‘এই কুলি অ্যাপ আমরা মানব না।’ তিনি বলছেন, ‘কোনও কুলি মারা গেলে বা অবসর নিলে তাঁর নম্বর দিয়ে তাঁর ছেলে কাজ পেতেন। নতুন ব্যবস্থায় এটাও বন্ধ হতে চলেছে।’ আসানসোলে কুলিদের ওই সংগঠনের দাবি, একটা সময়ে বছরে তাঁদের চারটি করে পোশাক দেওয়া হলেও ২০২৩ সালের পর আর তাঁদের পোশাক দেওয়া হয়নি।

    ঠিকাদার সংস্থার হাতে কুলিদের নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার বিষয়ে পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। পূর্ব রেলের কাছে এখনও পর্যন্ত এ রকম কোনও খবর এসে পৌঁছয়নি।’

  • Link to this news (এই সময়)