সোমনাথ মাইতি, দিঘা
এগিয়ে আসছে উদ্বোধনের দিন। তাই শুরু হয়ে গিয়েছে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানও। মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও মন্দির উদ্বোধনের আগে মন্দিরের গর্ভগৃহে ও মন্দিরের সামনের মণ্ডপে হোমযজ্ঞ, পুজোপাঠ শুরু হয়েছে। দিঘা জুড়ে সাজ সাজ রব এখন। চূড়ান্ত ব্যস্ততা। তার মধ্যে চিন্তাও রয়েছে একটা। বিশেষ করে, পহেলগামের ঘটনার পরে সেই ভাবনা বেড়েছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্তাদের মনে।
তবে এর মধ্যে প্রশাসনের আশ্বাস, দিঘার মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবস্থানগত ভাবে দিঘা বাংলা ও ওডিশা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায়। সামনে সমুদ্র। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে নিউ দিঘার একটি হোটেল থেকে বেঙ্গালুরুর কাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছিল এনআইএ। সেই ঘটনা মাথায় রেখে কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে নির্বিঘ্নে উদ্বোধন পর্ব মেটানো বড় চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৮ এপ্রিল থেকে দিঘায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ একাধিক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এসে পৌঁছবেন। ভিআইপিদের পাশাপাশি পুণ্যার্থীরাও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে দিঘায় ভিড় জমাতে শুরু করবেন। জেলা প্রশাসনের হিসেব মতো রেকর্ড ভিড় হবে মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ঘিরে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মন্দির–সহ দিঘা শহরকে ১৭০টি সিসি ক্যমেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রবিবার অন্য জেলা থেকে পুলিশ বাহিনী দিঘায় পৌঁছতে শুরু করেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দননগর এবং আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ছাড়াও হুগলি গ্রামীণ, বারুইপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ১৩ স্টেট আর্মড পুলিস ব্যাটেলিয়ন এবং ঝাড়গ্রামের স্পেশাল স্ট্রাইকিং ফোর্স থেকে বাহিনী আসছে দিঘায়। এ ছাড়া, মুর্শিদাবাদ, রানাঘাট, বীরভূম এবং বাঁকুড়া জেলা থেকে মোট পাঁচজন অতিরিক্ত পুলিস সুপার র্যাঙ্কের অফিসার দিঘায় থাকবেন। এছাড়াও ১০ জন ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার এবং ১৫ জন ইনস্পেক্টর বাইরের জেলা থেকে আসবেন। অন্যান্য জেলা থেকে সাব ইনস্পেক্টর এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর মিলিয়ে প্রায় ১২০ জন উদ্বোধনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
সোমবার, ২৮ এপ্রিল থেকে দিঘা শহরের মধ্যে যান চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হবে। যে সব গাড়ির শহরের ভিতরে ঢোকার পাস থাকবে সেগুলিকে ঢুকতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) শ্যামল মণ্ডল। জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘নিরাপত্তার উপর সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে দিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে। সমুদ্র সৈকতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমানা–সহ একাধিক জায়গায় নাকা চেকিং চালাচ্ছে পুলিশ।’
শুধু পুলিশ প্রশাসন নয়, শান্তিতে উদ্বোধন পর্ব শেষ হোক চাইছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনও। দিঘা–শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘মেগা ইভেন্ট হতে চলেছে। আমরাও চাইছি, শান্তিতে সমাপ্ত হোক। তা না হলে পর্যটন ব্যবসা ধাক্কা খাবে।’ দিঘার এক হোটেল মালিক সহস্রাংশু মাইতি বলেন, ‘মন্দির ঘিরে দিঘায় পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। লাভবান হবেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষ।’
মুগবেড়িয়া কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ও ইতিহাস গবেষক হরিপদ মাইতি বলেন, ‘জগন্নাথ এমন এক দেবতা যাকে বৈষ্ণব, শৈব, শবর–সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের দেবতা বলে দাবি করে। সকল সম্প্রদায়ের দেবতা সকলের উপর নজর রাখছেন। অশান্তি তিনি হতে দেবেন না।’ চিকিৎসক গৌতম প্রধান বলেন, ‘জগন্নাথ মন্দির যৌথ পরিবারের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। দুই ভাই এক বোনের পুজো হয় যেখানে। নতুন জগন্নাথ মন্দিরের কারণে শুধু দিঘা নয়, রামনগর এলাকার পর্যটনের বিকাশ হবে।’