• সাপ আর নেশাগ্রস্তদের দাপট! ভরপুর মজা পুজো-পিকনিকে
    এই সময় | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    চোখের সামনেই বিষধর সাপ। সতর্কভাবে আবাসনের সিঁড়িতে পা ফেলতে হয়। রাতের অন্ধকারে মোবাইলের আলো না জ্বালালে অপেক্ষা করে বিপদ। শুধু তাই নয়, সরকারি আবাসনের পাঁচিল টপকে মাঝেমধ্যে ঢুকে পড়ে নেশাগ্রস্তদের দল। সে দিকে নজর রাখতে আবাসিকরা দু’জন নিরাপত্তারক্ষী এবং নৈশপ্রহরী মোতায়েন করেছেন। কিছু কিছু আবাসনের অবস্থা জরাজীর্ণ হওয়ায় তা সংস্কারের দাবি তোলা হয়েছে আবাসিকদের একাংশের পক্ষ থেকে।

    মালদার ইংরেজবাজার পুরসভার মহেশমাটি সরকারি আবাসনের হাল এমনই। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, ওই আবাসনের পরিকাঠামো আগের থেকে অনেকটা ঠিক করা হয়েছে। মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, সরকারি আবাসন সাজিয়ে তোলার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই সবুজ সঙ্কেত মিলবে।

    ইংরেজবাজার শহরের আভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ২৪ নম্বর ওয়ার্ডটি। একপাশে উড়ালপুল, অন্যদিকে আইটিআই এবং ব্যস্ত রথবাড়ি এলাকা। উড়ালপুলের পাশে কয়েক হেক্টর জমির ওপর গড়ে উঠেছে মহেশমাটি সরকারি আবাসন। বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মী,অফিসার, ইঞ্জিনিয়াররা এখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। আবাসিকদের একাংশের বক্তব্য, ‘মান্ধাতার আমলের চারটি গাড়ি দীর্ঘদিন ধরে ভিতরে পড়ে রয়েছে। সেখানেই সাপের বাসা গজিয়ে উঠেছে। আবাসনের যেখানে সেখানে বিষধর সাপের দেখা মিলছে। ছোট ছোট বাচ্চারা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। যে কোনও সময়ে অঘটন ঘটতে পারে। এক সময়ে এই আবাসনের পাঁচিল টপকে নেশাখোররা ভিতরে ঢুকে পড়ত। পরিস্থিতির মোকাবিলায় আপাতত দু’জন নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়েছে।’

    অভিযোগ, এখানে জঞ্জাল ফেলার গাড়ি আসে ঠিকই। কিন্তু সেই জঞ্জাল মজুত করার কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে সকাল থেকে বেলা গড়িয়ে গেলেও আবর্জনা নিজেদের ঘরের প্লাস্টিকে মজুত করে রাখতে হয়। হাউজিং টেন্যান্ট কমিটির সম্পাদক নওশাদ আলি বলেন, ‘এই সরকারি আবাসনে নানা সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। কিছুদিন আগে অতিরিক্ত জেলাশাসক এসেছিলেন। তবে এখানে সাপের উৎপাত বেড়েছে। বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা যাতায়াত করে। কিন্তু সাপের আতঙ্কে আমরা তাদের ছাড়তে পারি না। প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে যাতে এই সরকারি আবাসনে শিশুদের জন্য একটি পার্ক গড়ে তোলা যায়।’

    জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘এই সরকারি আবাসনে অতিরিক্ত ঘর তৈরি করা ছাড়াও বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।’

    আবাসনে বেশ কিছু সমস্যা থাকলেও আবাসিকদের মধ্যে অবশ্য ভালো মিলমিশ রয়েছে। দুর্গাপুজোর সময়ে সম্প্রীতির মেলবন্ধন দেখা যায় এখানে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে দুর্গাপুজোয় অংশ নেন। একসঙ্গে পরিবার নিয়ে দোলও খেলেন। একই রকম ভাবে পয়লা বৈশাখ অথবা ২৫শে বৈশাখ সরকারি আবাসনে সাংস্কৃতিক চর্চায় মিলিত হন সকলে। নতুন বছরে আয়োজন করা হয় পিকনিকের। কেউ অসুস্থ হলে আবাসিকেরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। আবাসিকদের এমন ভূমিকার প্রশংসা করেছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুতপা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘সর্বধর্মের মানুষ মিলিতভাবে সরকারি আবাসনে থাকেন। একে অপরের সুখ ও দুঃখে সামিল হন। এটাই তো আমরা চাই।’

  • Link to this news (এই সময়)