৩৩ কোটি দেবতার পুজো করে দিঘায় জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠার আচার শুরু, মঙ্গলে মহাযজ্ঞ
প্রতিদিন | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: ৩৩ কোটি দেবতাকে দিঘায় আহ্বান জানাতে জগন্নাথ মন্দিরে হল বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণ। রবিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে পুরীর নিয়মে দিঘায় জগন্নাথ দেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠার আচার অনুষ্ঠান শুরু হল। মঙ্গলবার মহাযজ্ঞের আগে শাস্ত্রীয় মতে চলছে পুজোপাঠ ও হোমযজ্ঞ। জগন্নাথদেবের মূল মন্দিরের সামনে হোমযজ্ঞ করার জন্য তৈরি অস্থায়ী আটচালা ঘর। সেখানেই দু’বেলা পুজো এবং হোমযজ্ঞ চলছে। পুরীর মন্দির থেকে ৫৭ জন জগন্নাথদেবের সেবক এবং ইসকন থেকে ১৭ জন সাধু এসেছেন।
২৮ এপ্রিল সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় পৌঁছনোর কথা। ২৯ তারিখ হবে বিশ্বশান্তির জন্য মহাযজ্ঞ। ১০০ কুইন্টাল আম ও বেলকাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি পোড়ানো হবে। ৩০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই মন্দিরের দ্বারোদঘাটন ও জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিধান অনুযায়ী তা করবেন পুরীর রাজেশ দৈতাপতি। কোন কোন দিক থেকে পুণ্যার্থীরা আসবেন, তাঁদের গাড়ি কোথায় রাখা হবে, তাঁদের কোথায় বসানো হবে, তার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে।
দিঘা জুড়ে এখন উৎসবের মেজাজ। মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর ভাসছে সকাল থেকে। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের আগে ২৮ এপ্রিল সোমবার শুরু হয়ে যাচ্ছে দিঘা থেকে ১১৬ বি জাতীয় সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ। থাকছে বিশেষ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। মন্দির উদ্বোধনের সাক্ষী থাকতে জেলা, রাজ্য, প্রতিবেশী রাজ্যের বহু পুণ্যার্থী আসবেন সৈকত শহর দিঘায়। সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। যাঁরা মন্দির দর্শনে যাবেন, তাঁরা ওল্ড দিঘা থেকে ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার হেঁটে মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন। নিউ দিঘা বাস ডিপো থেকে আসবেন তাঁরাও, ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে শনিমন্দিরের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।
ট্রেনের যাত্রীরা ওল্ড দিঘার উপর দিয়ে ও বাইপাস ধরে দু’দিক দিয়েই দিঘার জগন্নাথের মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) শ্যামলকুমার মণ্ডল জানান, নন্দকুমার দিঘা ১১৬ বি জাতীয় সড়কে দিঘা গেট থেকেই যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিশেষ চেকপোস্ট থাকছে। যাঁদের গাড়ির পাস থাকবে তাঁরাই কেবল ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি গাড়িগুলিকে বাইপাস হয়ে বিভিন্ন পার্কিং পয়েন্টে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পাশাপাশি কোলাঘাট থেকে দিঘা পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ধারে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের ফ্লেক্স লাগানো হয়েছে। তমলুক এবং নন্দকুমার থানা এলাকায় প্রতি ১০০ মিটার অন্তর হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে লাগানো হয়েছে ফ্লেক্স। কোলাঘাট থেকে দিঘা যাওয়ার পুরো রাস্তাটা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। পুণ্যার্থীদের জন্য সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি প্রতিটি জায়গায় থাকছে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ। এছাড়াও সড়ক বরাবর প্রতিটি থানাকে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাজকুল, চণ্ডীপুর, নন্দকুমার-সহ বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, “আমরা জগন্নাথদেবকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।”