এই সময়, শিলিগুড়ি: শহর জুড়ে বহিরাগতদের ভিড়। বাস অথবা ট্রেন থেকে নেমেই ঢুকে পড়ছে শহরের নানা পাড়ায়। তার মধ্যে কে-ই বা দুষ্কৃতী আর কে মাদকাসক্ত, প্রথম নজরে চেনা কঠিন। ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার পরে খুঁজে বার করা আরও সমস্যার। খোদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলার এলাকার প্রত্যেক বাসিন্দাদের চেনেন না। অথচ অপরাধ ঘটার পরে পুলিশ প্রথমে কাউন্সিলারকেই খোঁজেন। সমস্যা মেটাতে কাউন্সিলারদের অনেকেই নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। ওয়ার্ডেই বসিয়ে নিয়েছেন সিসিটিভি ক্যামেরা। রাস্তার প্রতিটি মোড়ে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো, মনিটর বসানো কাউন্সিলারের অফিসে। ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের মোবাইলেও মনিটর অ্যাকটিভ করা রয়েছে। কোনও ওয়ার্ডে আবার মনিটরের পাসওয়ার্ড পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন কাউন্সিলার। পুলিশ প্রয়োজন মনে করলেই মনিটর দেখে অপরাধী শনাক্ত করতে পারবে।
তবে সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলারের এই সামর্থ্য নেই। কিন্তু অপরাধেরও কমতি নেই। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব তাই চান, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে সিসিটিভি বসাতে। শহর জুড়ে সিসিটিভি বসানো মুখের কথা নয়। কয়েক কোটি টাকার ব্যাপার। তহবিলের সন্ধান করছেন মেয়র। শিলিগুড়ির মেয়র বলেছেন, 'পুলিশ শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, বাজার, সরকারি দপ্তরের কাছে সিসিটিভি বসিয়েছে। ওয়ার্ডগুলোকে কী করে সিসিটিভির আওতায় আনা যায় সেটা দেখতে হবে। অনেক টাকা দরকার। সেই টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাঞ্জাবি পাড়ায় একটা সময়ে চুরি, ছিনতাই লেগেই থাকত। বেশিরভাগ ঘটনায় জড়িত ছিল মাদকাসক্তরা। বছর কয়েক আগে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ঠিক করেন, নিজেরাই সিসিটিভি বসিয়ে নেবেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। গোটা ওয়ার্ড মুড়ে দেওয়া হয় সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে। মনিটর বসানো হয় ওয়ার্ড অফিসে। পুলিশকেও পাসওয়ার্ড দিয়ে দেওয়া হয়। ব্যস, ওয়ার্ডে অপরাধ কমতে শুরু করে। অপরাধের ঘটনা কানে এলেই সিসিটিভি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা মেয়র পারিষদ মানিক দে বলেন, 'একটা সময়ে আমাদের এলাকায় ছিনতাই, চুরি নিয়মিত ঘটনা ছিল। এখন কমেছে। তবে সিসিটিভির রক্ষণাবেক্ষণও মুখের কথা নয়। পুরসভা সার্বিক ভাবে পদক্ষেপ করলে ভালো হয়।'
১২ নম্বর ওয়ার্ডেও সর্বত্র সিসিটিভি। বিধান মার্কেট লাগোয়া ওয়ার্ড বলে বহিরাগতদের ভিড় বেশি। ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের মোবাইলেও সিসিটিভি মনিটর করার অ্যাপ বসানো রয়েছে। কাউন্সিলার বাসুদেব ঘোষ বলেন, 'এর মধ্যেই একটা ঘটনা ঘটেছে। একটি ছেলে আমাদের এক ওয়ার্ড কমিটি সদস্যের বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছিল। দেখতে পেয়ে আর এক সদস্য ওয়ার্ড কমিটিকে সতর্ক করে দেয়। সকলে ছুটে গিয়ে দেখা যায়, অনুমান সঠিক। ছেলেটি মাদকাসক্ত। দেওয়াল টপকে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছিল।' বাসুদেব নিজের পয়সায় সিসিটিভি লাগিয়েছেন। ওয়ার্ড কমিটির সদস্যরাও সহযোগিতা করেন। সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলার এবং ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের এই সামর্থ্য নেই। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অনিতা শা বলেন, 'এত লোক সারাদিন আমার ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি করে। সবাইকে চিনিই না। সিসিটিভি ক্যামেরা হলে খুবই ভালো হতো।'