সুমন করাতি, হুগলি: পহেলগাঁও হামলার এক সপ্তাহ পার। জঙ্গিদের বুলেটবৃষ্টিতে বিদেশি-সহ ২৬ নিরীহ মানুষের ঝাঁজরা হয়ে যাওয়ার ক্ষত এখনও টাটকা। ঘটনার পরপর ভারত-পাকিস্তানে সীমান্ত সুরক্ষা বৃদ্ধি করে বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেই কাজ করতে গিয়ে ‘ভুল করে’ পাক ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বিপাকে পড়েছেন বিএসএফে কর্মরত বাংলার জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউ। তিনি এই মুহূর্তে পাক সেনার হাতে ‘বন্দি’ বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু গত ৬ দিন ধরে কোনও খোঁজ নেই তাঁর। কেন্দ্র, বিএসএফ ? কেউ কিছু বলতে পারছে না। স্বামীকে উদ্ধারে এই ‘গয়ংগচ্ছ’ মনোভাবে ক্ষুব্ধ পূর্ণমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী। তাই স্বামীর খবর নিতে বাধ্য হয়েই সোমবার ৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে পাঠানকোটের উদ্দেশে রওনা দিলেন তিনি। যাওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক তোপ দাগলেন ‘আটক’ সেনার স্ত্রী।
হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা পূর্ণমকুমার সাউ বেশ কয়েক বছর ধরে বিএসএফে কর্মরত। পাঠানকোটে তাঁর পোস্টিং। পহেলগাঁও আবহে গত ২৩ তারিখ থেকে তাঁর খোঁজ মিলছে না। সীমান্তে টহলদারি মাঝে নাকি ‘ভুল করে’ তিনি সীমান্ত পেরিয়ে পাক রেঞ্জার্সের হাতে ‘আটক’ হয়েছেন বলে প্রাথমিক খবর। বাড়িতে সেই দুঃসংবাদ পৌঁছতেই চিন্তা চরমে পৌঁছেছে বাড়ির লোকজনের। বিশেষত পূর্ণমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিশেষভাবে চিন্তিত।
সোমবার সংবাদমাধ্যমের সামনে কার্যত নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন রজনীদেবী। বললেন, ”সকলেই আসছেন আর আশ্বাস দিচ্ছেন। বলছেন চিন্তা না করতে। কিন্তু আমার স্বামী দুশমন দেশে আটকে রয়েছেন। আমি কি চিন্তা করে থাকতে পারি? এতদিন তো কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ওঁরা (বিএসএফ আধিকারিক) আসছেন আর বলছেন, একটা সমস্যা আছে,তার সমাধান হলেই আমার স্বামী ছাড়া পাবেন। কিন্তু কবে তা হবে, আমার স্বামী ততদিন আটকে থাকবেন? ধরুন যদি ওই সমস্যা সমাধান হতে ১ বছর সময় লাগে, উনি একজন জওয়ান হয়ে কি ১ বছর ওখানে আটকে থাকবেন? আমি তো শুনছি, এখনও কোনও প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি।”
বিএসএফ, কেন্দ্র সকলের উপর ভরসা হারিয়ে তাই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পাঠানকোট যাচ্ছেন রজনীদেবী। এমন শারীরিক পরিস্থিতিতে এত দূরে যেতে হচ্ছে বলে যারপরনাই বিরক্ত পূর্ণমপত্নী। বলছেন, ”আমি ওখানে গিয়ে কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলব। কিছু একটা গোপন করা হচ্ছে ওখানে গেলেই হয়তো কিছুটা সামনে আসবে আসল ঘটনা। যদি কিছু না জানতে পারি, তাহলে দিল্লি গিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে সব জানতে চাইব।”