• ওএমআরে গলদ থাকলেই অযোগ্য? ‘যোগ্য’ তালিকায় রাখার দাবিতে হাজরায় অবস্থান, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চাকরিহারারাদের
    আনন্দবাজার | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ওএমআরে গলদ থাকায় ‘যোগ্য’দের তালিকা থেকে আগেই বাদ গিয়েছে নাম। গত বৃহস্পতিবার থেকেই তালিকায় নাম না-থাকা শিক্ষকেরা তা নিয়ে দফায় দফায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সোমবার সকালেও হাজরা মোড়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করলেন সেই ‘অযোগ্য’রা।

    সোমবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে কালীঘাটে তাঁর বাড়ির দিকে মিছিল করে যাচ্ছিলেন চাকরিহারারা। কিন্তু যতীন দাস পার্কের কাছে হাজরা মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। প্রতিবাদে সেখানেই বসে পড়েন তাঁরা। কেউ কেউ পুলিশের গার্ডরেল ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ ধস্তাধস্তিও হয় তাঁদের। এরই মাঝে বেশ কয়েক জন চাকরিহারাকে আটক করে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্তও হাজরা মোড়ে চলছে ব্যাপক উত্তেজনা। মহিলা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের কেউ কেউ পুলিশের গাড়ির সামনে বসে পড়েছেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দু’জন।

    ওএমআরে সমস্যা থাকায় যাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সোমবারের বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন তাঁরাই। তাঁদের প্রশ্ন, যেখানে আদালতে ওএমআরে কারচুপির বিষয়টি এখন‌ও প্রমাণিত হয়নি, সেখানে এসএসসি কী করে তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে দাগিয়ে দিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারে? এই নিয়ে হাজরা মোড়ে অবস্থানে বসেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের দাবি, তাঁরা ‘অযোগ্য’ নন, দুর্নীতির সঙ্গেও যুক্ত নন। তাই যোগ্যদের তালিকায় তাঁদেরও নাম রাখা হোক। এমনই এক চাকরিহারা শিক্ষিকা শতাব্দী সরকারের প্রশ্ন, ‘‘তদন্ত সংস্থা সিবিআইও প্রমাণ করতে পারেনি আমরা অযোগ্য। তা হলে স্কুল সার্ভিস কমিশন কিসের ভিত্তিতে আজ আমাদের রাস্তায় বসিয়ে দিল?’’

    আর এক চাকরিহারা শিক্ষক সৌমেন সামন্ত বলেন, ‘‘যে কারণ দেখে আমাদের অযোগ্য বলা হচ্ছে, সেই ওএমআরে গলদের বিষয়টি এখনও প্রমাণিত হয়নি। সেই সংখ্যাটা ৫ হাজারেরও বেশি। তার আগেই আমাদের কী ভাবে অযোগ্য বলে দাগিয়ে দিচ্ছে সরকার? ‘যোগ্য’ তালিকায় কেন আমাদের নাম নেই?’’ বাকিদের মতোই ‘যোগ্য’দের তালিকায় নাম নেই সৌমেনেরও। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে তাঁদের স্কুলে যেতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। চাকরিহারারা চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। অথবা কোনও প্রতিনিধিকে পাঠাতে হবে। সরকারি হস্তক্ষেপে সমাধান নিয়েও আশাবাদী তাঁরা।

    শনিবারও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিতে তাঁর বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন চাকরিহারা এই শিক্ষকেরা। কিন্তু ব্রাত্য তখন বাড়িতে ছিলেন না। এর পরেই মন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্নায় বসে পড়েন তাঁরা। পরে পুলিশ মারফত মন্ত্রীর থেকে সাক্ষাতের আশ্বাস পেলে তাঁরা অবস্থান তুলে নেন। ঠিক হয়, সোমবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে মিছিল করে যাওয়া হবে।

    তবে কে ‘যোগ্য’, কে ‘অযোগ্য’, তা এখনও এত স্পষ্ট নয়। রাজ্যের তরফে আগেই ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’ নন, এমন ১৭ হাজার ২০৬ জন শিক্ষকের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেই তালিকা সুপ্রিম কোর্টেও জমা দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। গত বুধবার সেখান থেকে বাদ যায় আরও ১৮০৩ জনের নাম। পর্ষদ জানিয়েছে, ওই ১৮০৩ জনের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র-সহ একাধিক বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। তাঁদের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১৫,৪০৩। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই শিক্ষকেরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন এবং বেতন পাবেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)