মৃত্যুর পরেও আরজি করে নির্যাতিতার মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়েছে! আদালতে লিখিত দাবি পেশ পরিবারের
আনন্দবাজার | ২৮ এপ্রিল ২০২৫
মৃত্যুর কয়েক মাস পরেও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। সোমবার আদালতে এমনটাই দাবি করল তাঁর পরিবার। শিয়ালদহ আদালতে মুখবন্ধ খামে এই ঘটনা নিয়ে একটি ‘সিনপসিস’ জমা করেছে তারা। সেখানেই লিখিত ভাবে এই দাবি করেছে চিকিৎসক-পড়ুয়ার পরিবার। যদিও আদালতে এটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পরিবারের দাবি, মৃত্যুর কয়েক মাস পরে নির্যাতিতার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের কার্যকলাপ থেকে এই রকম তথ্য পরিবারের কাছে এসেছে বলে তাদের দাবি। পরিবারের আইনজীবীর দাবি, আরজি কর-কাণ্ডের পরে নির্যাতিতার মোবাইল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল। পরে সিবিআই তদন্তভার হাতে নেয়। তার পর থেকে তাদের হেফাজতেই রয়েছে সেই মোবাইল। পরিবারের প্রশ্ন, তা হলে ওই মোবাইল নম্বর দিয়ে কী ভাবে হোয়াট্সঅ্যাপে অ্যাকসেস হল?
নির্যাতিতার পরিবারকে বিচারক জানান, তাদের কিছু বলার থাকলে সিবিআইকে জানানো হোক। কারণ তারাই এই কাণ্ডের তদন্ত করছে। সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, নির্যাতিতার পরিবারের কিছু জানানোর থাকলে তাদের জানাতেন। নির্যাতিতার আইনজীবী সওয়াল করে জানান, অনেক তথ্যই সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল। তার কী ফলাফল হয়েছে, তা তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাই তিনি বিচারককে সেই অভিযোগ পড়ে দেখার অনুরোধ করেন। সূত্রের খবর, আরজি করের ঘটনা কী ভাবে ঘটল এবং তার আগে ও পরে কী হয়েছিল, তা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ওই ‘সিনপসিস’-এ জানানো হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে পরিবার যে তথ্য পেয়েছে, তার ভিত্তিতেই লিখিত ভাবে আদালতে দাবি জানিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। সেই ‘সিনপসিস’-এ ডিএনএ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে বলেও সূত্রের খবর। পরিবারের আইনজীবীর বক্তব্য, ‘‘হাই কোর্টে এই মামলা চলছে। কিন্তু কাকে বিশ্বাস করব, বোঝা যাচ্ছে না। এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসারকে সেই প্রথম দিকে এক বার দেখেছিলাম, তার পর আর দেখতে পাইনি। তা হলে কাকে দেব? এর আগেও কিছু তথ্য তদন্তকারী অফিসারকে দিয়েছিলাম, কিন্তু তার কোনও উত্তর পাইনি।’’
সিবিআই এই ‘সিনপসিস’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। হাই কোর্টে যে হেতু এই মামলা চলছে, তাই ঘন ঘন ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও সওয়াল করেন তিনি। ১০ জুন পরবর্তী স্টেটাস রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এর আগেও আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল নির্যাতিতার পরিবার। শিয়ালদহ আদালত আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলার রায় দেওয়ার আগে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে সেই আবেদন করা হয়। যদিও বিচারপতি ঘোষ জানিয়েছিলেন, শীর্ষ আদালতের অনুমতি ছাড়া শুনানি সম্ভব নয়। সেইমতো শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় পরিবার। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে হাই কোর্টে ওই মামলার শুনানি হতে পারে। এর পরে বিচারপতি ঘোষ মন্তব্য করেন, আরজি কর-কাণ্ড গণধর্ষণ, না কি নয়, তা আদালতের কাছে স্পষ্ট করুক সিবিআই। সিবিআই স্টেটাস রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিল, চিকিৎসক-পড়ুয়ার গণধর্ষণ হয়নি। ধর্ষিত হয়েছিলেন তিনি। এ বার নির্যাতিতার পরিবার আদালতে লিখিত দাবি পেশ করে জানাল, নির্যাতিতার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরেও, যে মোবাইল এখন সিবিআইয়ের কাছে রয়েছে।