”শত্রুদের দেশ” থেকে স্বামীকে সুস্থভাবে দেশে ফেরাতে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পঞ্জাবের পাঠানকোটে গেলেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউয়ের স্ত্রী রজনী সাউ। সোমবার সকালে নিজের আট বছরের পুত্র সন্তান, দুই বোন ও ভাইকে নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমানে চেপে চণ্ডীগড়ে যান তিনি। সেখান থেকে সড়কপথে পৌঁছন পাঠানকোটে। সেখানেই ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলবেন পূর্ণমের পরিবারের সদস্যরা। স্বামীর কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে কেন্দ্র ও বিএসএফের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন রজনী।
গত বুধবার দুপুরে পাঠানকোটের ফিরোজপুরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল পূর্ণম ভুল করে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে ঢুকে পড়েছিলেন। সেখানেই একটি গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাক রেঞ্জার্স তাঁকে বন্দি করে। পূর্ণম পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রিষড়ার বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে বিএসএফ ও পাক রেঞ্জার্সের উচ্চ আধিকারিকদের মধ্যে একাধিক বৈঠকের পরেও পূর্ণমকে ফেরায়নি পাকিস্তান। রবিবার পূর্ণমের রিষড়ার বাড়িতে এসে তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বিএসএফের আধিকারিকরা। কিন্তু তারপরেও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। তাই তাঁরা পূর্ণমের কর্মস্থল পাঠানকোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সোমবার পাঠানকোটে রওনা দেওয়ার আগে পূর্ণমের স্ত্রী বলেন, ”দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বা বিএসএফ আমার স্বামীর ব্যাপারে কোনও খবর দিতে পারেনি। ছয় দিন হয়ে গেল। শুধু জেনেছি তিনি পাকিস্তানে বন্দি রয়েছেন। আমি গিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে দিল্লির দরজায় কড়া নাড়ব।” রজনীর দাবি, যে মানুষটা ১৭ বছর ধরে বিএসএফ জওয়ান হিসেবে কর্মরত, তিনি সীমান্ত এলাকা চিনবেন না এটা কি হতে পারে? এর পিছনে অন্য কোনও বিষয় থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তিনি। তাই অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর কর্মস্থলে গিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চান রজনী। বিএসএফের আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না পূর্ণমের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, অতি দ্রুত তাঁকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।
কেন্দ্র ও বিএসএফের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রজনী জানিয়েছেন, তিনি জানতে পেরেছেন যে এখনও তাঁর স্বামীকে ফেরানোর কোনও প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। বিএসএফ বলছেন, একটা সমস্যা আছে, সেটা মিটে গেলেই পূর্ণম ছাড়া পাবেন। কিন্তু সেই সমস্যা কত দিনে মিটবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই মহিলা। পাঠানকোটে কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে কোনও কাজ না হলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে যাবেন বলে জানিয়েছেন রজনী।
এ দিন পাঠানকোটে রওনা হওয়ার আগে পূর্ণমের আট বছরের পুত্রসন্তান জানিয়েছে, সে বাবাকে আনতে যাচ্ছেন। তার কথায়, ”পাকিস্তান আমার বাবাকে ছেড়ে দিক। আমি আর কিছু চাই না। বাবাকে খুব ভালবাসি। সব ছিনিয়ে নিক, কিন্তু বাবাকে না।”