নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচার! আশঙ্কা করছেন জেলাশাসকই
বর্তমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচার! সরকারি হাসপাতাল থেকে পরিত্যক্ত শিশু মিললেও জেলার কোনও নার্সিংহোমে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে না। এনিয়ে মিটিংয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেন খোদ জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া। তাঁর আশঙ্কা, কোনও নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে না তো!
মালদহের নার্সিংহোমগুলির কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সোমবার একটি পর্যালোচনা বৈঠক করে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর। সেখানে জেলাশাসক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, একটাও মিসিং চাইল্ড বা পরিত্যক্ত শিশুর খবর পাচ্ছি না কোনও নার্সিংহোম থেকে। কেন? সরকারি হাসপাতাল থেকে তো আমরা এধরনের শিশুর খবর পাই। বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমাদের জেলায় সারা বছরে নার্সিংহোমে এরকম একটাও কেস হয় না। তার মানে কোনও শিশু ওখান থেকে বেআইনিভাবে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে না তো? যেটা আইনত আমাদের ‘সা’ (স্পেশ্যালাইজড অ্যাডপশন এজেন্সি) এর মাধ্যমে যাওয়ার কথা ছিল। সরকারের অ্যাডপশন এজেন্সি আছে। আপনাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
জেলাশাসক ভরা সভায় এবিষয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষদের সতর্ক করে দেন। তাঁর মন্তব্য, যদি এই ধরনের কেস আপনাদের নজরে আসে, তাহলে অবিলম্বে প্রশাসনকে জানাতে হবে। নাহলে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নার্সিংহোম সিল হয়ে যেতে পারে। গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারেন। যদি আমরা এই ধরনের কিছু খবর পাই, তাহলে কড়া পদক্ষেপ নেব।
মালদহ জেলা জুড়ে প্রায় আড়াইশো ছোট, বড় নার্সিংহোম আছে। মাঝেমধ্যেই কিছু কিছু নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসছে। সেই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমে হানা দিতেই চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা হয় জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ নজরদারি দলের। গত কয়েক মাসে এই ধরনের বেশকিছু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মোটা টাকা আর্থিক জরিমানা সহ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের নার্সিংহোমগুলি থেকে একটাও পরিত্যক্ত শিশুর কেস ইস্যু না হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য কর্তাদের কপালে। এনিয়ে নাকি স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বিভিন্ন সময়ে জেলার কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
মালদহের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন অম্বরীশ বর্মন বলেন, জেলা প্রশাসনের তরফে এবিষয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাছে মাসিক রিপোর্ট তলব করা হয়। কিন্তু নার্সিংহোম থেকে এই ধরনের কোনও তথ্য আসে না। অন্যদিকে, এদিনের বৈঠকে নার্সিংহোমগুলির স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা চলে। জেলা প্রশাসন এদিন মালদহের ১৭ টি নার্সিংহোমের তালিকা প্রকাশ করে। যারা নিয়মিত রোগী ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা করলেও রোগীকে স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা প্রদান করে না। এদিন এক এক করে এই ১৭টি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। এমনও অভিযোগ সামনে এসেছে যে, ১০ শয্যা থাকলেই স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক, সেক্ষেত্রে অনেকেই ৯ শয্যার জন্য লাইসেন্সের আবেদন করছেন। এই প্রবণতাকেও ভালো চোখে দেখছে না প্রশাসন।
এদিনের বৈঠকে জেলাশাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য) সেখ আনসার আহমেদ, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি সহ অন্য আধিকারিকরা।