• বধূকে খুনের পর দেহ বস্তায় ভরে বাপের বাড়ির সামনে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ
    বর্তমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাঁথি: অতিরিক্ত পণ না পাওয়ায় এক গৃহবধূকে খুন করে তাঁরই বাপের বাড়ির সামনে বস্তায় ভরে ফেলে দিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল মৃতার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গত রবিবার রাতের। সেদিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ির বাইরে শৌচালয়ে গিয়েছিলেন চক-অরকবাড়ি গ্রামের গোরাচাঁদ দাস। সে সময়ে পুকুর পাড়ে কিছু একটা ফেলার শব্দ পেয়ে তিনি বাইরে বেরিয়ে আসেন। দেখতে পান একটি বস্তা পড়ে রয়েছে। অত রাতে বস্তা পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যান গোরাচাঁদবাবু। মনে সাহস এনে বস্তার মুখ খোলেন গোরাচাঁদবাবু। কিন্তু যা দেখেনে তাতে তাঁর শরীরের রক্ত জল হয়ে যায়। এ তো তাঁরই মেয়ে প্রতিমা প্রামাণিকের (২২) নিথর দেহ! প্রতিমাকে খুন করে বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছে কেউ। তিনি বাড়ির লোকজনকে ডাকেন। তখনই দেখেন, সাইকেলে করে কেউ পালাচ্ছে। তবে তাকে তাড়া করে ধরা যায়নি। উধাও হয়ে যায় সাইকেল আরোহী। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় রাতেই গ্রামবাসীরা ভিড় জমান। থানায় খবর দেওয়া হয়। তালপাটিঘাট কোস্টাল থানার পুলিস দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। গোরাচাঁদবাবু তাঁর জামাই সহ ছ’ জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিস। তবে প্রতিমার স্বামী দুর্লভ প্রামানিক ততক্ষণে পালিয়েছে। পুলিস প্রতিমার শ্বশুর দুধকুমার প্রামাণিক, শাশুড়ি রিনা প্রামাণিক, দেওর রাহুল প্রামাণিক ও জা রিমি প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করে।  

    বছর চারেক আগে নিজকসবা পঞ্চায়েতের থানাবেড়িয়া গ্রামের দুর্লভের সঙ্গে বিয়ে হয় প্রতিমার। দুর্লভের ফিশারি ছাড়াও ধানের ব্যবসা ও পানের বরজ রয়েছে। বিয়ের পর দুর্লভ ও প্রতিমার একটি ছেলে হয়। তার বয়স এখন তিন বছর। বিয়ের সময় যথাসাধ্য পণ দিয়েছিলেন গোরাচাঁদবাবু। কিন্তু তারপরও আরও টাকা দাবি করে প্রতিমার উপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও দুর্লভ শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত বলে অভিযোগ গোরাচাঁদবাবুর। প্রতিমাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করাত। গত একবছর প্রতিমাকে একবারও বাপের বাড়ি আসতে দেয়নি তারা। এইসব অশান্তির কারণে ইতিপূর্বে দুই গ্রামের মোড়লরা দু’টি পরিবারকে নিয়ে সালিশি সভা করেছেন। কিন্তু সমস্যা রয়েই গিয়েছিল। গত শুক্রবারও দুই পরিবারকে নিয়ে সালিশি হয়। তারপরেই এই ঘটনা। গোরাচাঁদবাবু বলেন, মেয়ের উপর সবসময় অত্যাচার চালাত জামাই সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বিয়ের পর থেকে একদিনও শান্তি পায়নি প্রতিমা। তবে মেয়েকে যে এরা এভাবে খুন করে ফেলবে, তা কোনওদিন ভাবিনি। গৃহবধূর মামাতো দাদা পার্শ্ববর্তী সাতশিমলি গ্রামের তাপস দাস বলেন, বোনকে যারা খুন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি পুলিসের কাছে জানিয়েছি। কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস বলেন, বিস্তারিত জানতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)