১১ বছর ধরে কেন্দ্র বাংলার নদীভাঙন রোধে এক টাকাও দেয়নি, বাঁধ সংস্কারে ফি বছর রাজ্যের খরচ ৫৮৫ কোটি: সেচমন্ত্রী
বর্তমান | ২৯ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বাংলায় নদী সংস্কারে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সুর সপ্তমে তুললেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। সোমবার সেচদপ্তরের আধিকারিক, পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়ার পুলিস প্রশাসনের কর্তা, এমপি, এমএলএদের নিয়ে দুর্গাপুর ব্যারেজ পরিদর্শনে এসেছিলেন বর্ষীয়ান ক্যাবিনেট মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে নদীভাঙন রোধে এক টাকাও দেয়নি বাংলাকে। আমরা প্রতি বছর ২৮৬-২৯০ কিলোমিটার নদীবাঁধ সংস্কার করি। প্রতি বছর ৫৮৫ কোটি টাকা খরচ হয়। আমাদের বাজেটে তা ধরে রাখতে হয়’। এরপরই তিনি ঘোষণা করেন, ‘খাল, বিল সংস্কারেও কেন্দ্র কোনও সাহায্য করেনি। তার উপর রাজ্যের প্রাপ্য ২ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে তারা। তা সত্ত্বেও আমরা খাল, বিল সংস্কারে নামব। খাল, বিল, নদী থেকে পলি তোলার জন্য আমরা অনুমতি দেব। তার জন্য নির্দিষ্ট রয়্যালটি ও প্রিমিয়াম জমা করতে হবে। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি হবে। ইতিমধ্যেই প্রত্যেক জেলাশাসকের কাছে এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে’।
যদিও রাজ্যের মন্ত্রীর বঞ্চনার অভিযোগ মানতে চাননি দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক তথা বিজেপি রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সরকার রাজ্য সরকারকে সব প্রকল্পেই কোটি কোটি টাকা দিয়েছিল। সেই সব টাকায় বেনিয়ম হয়েছে। তৃণমূল নেতারা কাটমানি খেয়েছেন। কেন্দ্রকে টাকার হিসাব দিতে পারেনি রাজ্য। ১৯৫৫ সালে গড়ে উঠেছে দুর্গাপুর ব্যারেজ। সাত দশক ধরে দামোদর দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। কংগ্রেসের পর সিপিএমও দুর্গাপুর ব্যারেজের সম্পূর্ণ সংস্কারের কাজে হাত দেয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে বেহাল হয়ে পড়া দুর্গাপুর ব্যারেজের মেগা সংস্কারে নামছে রাজ্য সরকার। তার আগেই ব্যারেজের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে গেলেন মানস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের এমপি অরূপ চক্রবর্তী, বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পোন্নমবলম এস, বাঁকুড়ার জেলাশাসক সিয়াদ এন, পুলিস কমিশনার সুনীল চৌধুরী, বাঁকুড়ার এসপি বৈভব তেওয়ারি।
দুর্গাপুর ব্যারেজ নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাত বহু পুরনো। ডিভিসির তৈরি ব্যারেজ এখন সেচদপ্তর দেখভাল করে। এই বিশাল ব্যারেজ পলি পড়ে বুজে গিয়েছে। এদিন ব্যারেজে এসেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বন্য নিয়ন্ত্রণে বিহারকে টাকা দেওয়া হলেও বাংলাকে দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি তিনি বলেন, এবার নদী ও খাল বিল সংস্কারে রাজ্যের উদ্যোগী হবে। প্রশ্ন উঠেছে, এবার কি দুর্গাপুর ব্যারেজের পলি তুলতে রাজ্য সরকার তৎপর হবে? আশায় রয়েছেন বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দারা। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, ব্যারেজটি সেচদপ্তর দেখভাল করে, তাই সেই সিদ্ধান্ত তারাই নেবে। আমাদের জেলার যে খাল, বিল রয়েছে, তা থেকে পলি তোলার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব চিত্র