নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: শনিবার রাত থেকে টানা দু’ দিন বিদ্যুৎহীন রইল আরামবাগ ও খানাকুলের বিস্তীর্ণ অংশ। সোমবার সকালে কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ ফিরলেও তা স্থায়ী হয়নি। মাঝেমাঝেই বিভ্রাট চলতে থাকে। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার এক আধিকারিক জানান, প্রায় ২৫০টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। বাঁকুড়া থেকে শ্রমিক, খুঁটি এনে কাজ করতে হচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে কিছু জায়গায় কাজ করতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। তবে সোমবার সন্ধের পর মহকুমার কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ ফিরলেও পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লেগে যায়।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ কালবৈশাখী শুরু হয়। সঙ্গে বজ্র বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি। তাতেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় সবকিছু। বহু গাছ ভেঙে পড়ে। আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে গাড়ির উপর গাছ পড়ে একজন জখম হন। হরিণখোলায় মাটির ঘর চাপা পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। জখম হন তাঁর দুই ছেলে। এছাড়া অনেকের ঘরবাড়ির চাল উড়ে যায়। বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়। শনিবার রাতের পাশাপাশি রবিবারও দিনভর বিদ্যুৎ ছিল না মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশে। তার ফলে অসুবিধায় পড়েন খানাকুলের দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রোগীরা। নতিবপুর গ্রামীণ হাসপাতালে জেনারেটর চালাতে প্রায় ১৮ লিটার জ্বালানি খরচ হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সেখানেও নানা কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি। বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক না হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও জোর চর্চা চলেছে। খানাকুলের বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ এদিন বিদ্যুৎ দপ্তরের অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। অন্যদিকে, কৃষিতেও কিছু জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরামবাগের গৌরহাটির বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক হিমাদ্রিশেখর চট্টোপাধ্যায় বলেন, দু’ রাত বিদ্যুৎ ছিল না। ইমার্জেন্সি লাইটে চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর হ্যারিকেন জ্বালানো ছাড়া উপায় ছিল না। ঘরে থেকে যাওয়া কিছুটা কেরোসিনই ত্রাতা হয়ে দাঁড়ায়। স্কুল-কলেজেরর পড়াশোনা থেকে প্রশাসনিক দপ্তরের কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
বাসিন্দারা বলছেন, এখন লোডশেডিং প্রায় হয় না বললেই চলে। এই অবস্থায় প্রায় দু’ দিন বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যায় পড়ে মানুষ। পুরনো হ্যারিকেন, মোমবাতির স্মৃতি ফিরে আসে। আরামবাগের দর্জিপোতার বাসিন্দা শেখ নূরাই জামাল বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় মোমবাতি জ্বালাতে হয়। খুবই কষ্টের মধ্যে কাটাতে হয়েছে দু’ দিন। ওই গ্রামেরই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আসিয়া খাতুন বলে, ঝড়ে ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। বৃষ্টিতে বইপত্রও ভিজেছে। সরকারি সাহায্য পেলে ভালো হয়। খানাকুল ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মিন্টু পাল বলেন, বিদ্যুৎ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই চলছিলাম আমরা। হ্যারিকেন ভরসা। নিজস্ব চিত্র