• জগন্নাথদেবের সুতোয় মিলে গেল পুরী-দিঘা, পর্যটনে নবভাবনা
    এই সময় | ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • একটি জায়গার ইতিহাস অন্তত হাজার বছরের পুরোনো, অন্য জায়গাটি একেবারেই নতুন। আড়াইশো বছর আগেও তার অস্তিত্বের কথা সে ভাবে জানতেন না কেউ।

    একটি জায়গার পরিচয় ‘শ্রীক্ষেত্র’ হিসেবে। গোটা দেশ থেকে সারা বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন পুণ্য অর্জনের জন্য। এ ছাড়া তার পর্যটনকেন্দ্র পরিচয় তো আছেই। অন্য জায়গাটি এতদিন নিছক ট্যুরিজ়ম স্পট হিসেবে পরিচিত ছিল — আধ্যাত্মিকতার কোনও যোগ ছিল না।

    জগন্নাথদেবের সৌজন্যে এ বার প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরত্বের এই দুই জায়গা এক সুতোয় বাঁধা পড়তে চলেছে। প্রথম জায়গাটি পুরী। দ্বিতীয়টি দিঘা। সামান্য ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই বাঙালির মনে প্রথম যে তিনটি জায়গার কথা মনে হয়, সেই দিঘা–পুরী–দার্জিলিং অর্থাৎ ‘দিপুদা’–র প্রথম দু’টি জায়গাই এ বার ‘জগন্নাথ ধাম’ হতে চলেছে।

    আগামী কাল, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হচ্ছে। কিন্তু, ইতিহাস ও উপকথার মিশেলে গত কয়েকশো বছর ধরে পুরীর জগন্নাথ মন্দির যে রহস্যে মোড়া আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, সেটাই তার সবচেয়ে বড় ইউএসপি।

    পুরীর জগন্নাথ মন্দির নিয়ে বিতর্কও কম নেই। কবে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল, সে বিষয়ে একমত নন ইতিহাসবিদ ও পুরাতত্ত্ববিদরা। অনুমান করা হয়, এই মন্দির তৈরি হয়েছিল দ্বাদশ শতাব্দীতে। ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যের ক্ষেত্রে ‘অন্যতম বিস্ময়’ হিসেবে পরিচিত পুরীর জগন্নাথ মন্দির দেশের উচ্চতম মন্দিরগুলোর অন্যতম। এটি যে আদতে একটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল, এমন দাবিও করে থাকেন পুরাতত্ত্ববিদদের একাংশ।

    ইতিহাস বলে, দ্বাদশ শতকে গঙ্গ বংশীয় রাজাদের আমলে নির্মাণ শুরু হয় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের। পরে গঙ্গ ও গজপতি বংশের অন্যান্য রাজাদের আমলে এই মন্দিরের ধারাবাহিক উন্নতি হয়। এর আরও কয়েকশো বছর পরে শ্রীচৈতন্যদেব পুরীতে আসার পর থেকেই সেখানে যেন বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

    পুরীর মন্দিরের মতো এত বর্ণময় ইতিহাস দিঘার নেই। সমুদ্র সৈকত হলেও দিঘার প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় বাংলার প্রথম বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে। তখন দিঘার নাম ছিল বীরকুল। হেস্টিংস তাঁর স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বীরকুলকে ‘প্রাচ্যের ব্রাইটন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। প্রধানত ব্রিটিশদের জন্যই দিঘা জনপ্রিয় হয়। তবে ১৯২০–র দশকের আগে দিঘায় মানুষের বসতি সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী জন ফ্রাঙ্ক স্মিথ ১৯২৩ সাল থেকে এখানে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতার পরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে তিনিই এই এলাকায় পর্যটন পরিকাঠামো তৈরির কথা বলেন। সেই থেকে দিঘায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে।

  • Link to this news (এই সময়)