সেই চেনা দিঘা–ই, কিন্তু ঠিক যেন চেনা নয়। রাতের দিঘা এখন যেন বড়দিনের পার্ক স্ট্রিট!
ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত পুরো রাস্তা সেজে উঠেছে নতুন সাজে। তবে দিঘাকে কিছুটা অচেনা ঠেকছে আরও একটা কারণে। দিঘার সেই চির পরিচিত ভিড়টাই উধাও। এমনিতে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন, সোমবার দিঘায় ভিড় কিছুটা কম–ই থাকে। কিন্তু তা বলে রাস্তাঘাট এতটা ফাঁকা থাকে না, এমনটাই জানাচ্ছেন স্থানীয় দোকানদাররা।
তবে পর্যটকদের যে টুকু ভিড় রয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় দেখা গেল, চুম্বকের মতো সেটা টেনে নিয়েছে নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির। আজ, মঙ্গলবার এই মন্দিরে মহাযজ্ঞ হবে। তাতে পূর্ণাহুতি দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কাল, বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ায় মন্দিরে জগন্নাথদেবের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। তার পরেই মন্দিরের শুভ উদ্বোধন।
সোমবার দুপুরে দিঘা পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা— আধ্যাত্মিকতা ও সম্প্রীতির এক মিলন ক্ষেত্র হতে চলেছে এই জগন্নাথ মন্দির। এ দিন ভিড় না–হলেও কাল, মঙ্গলবার ও পরশু, বুধবার বেশ ভিড় হবে বলেই মনে করছে প্রশাসন।
গত কয়েক দিন ধরে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে বিভিন্ন দেবদেবীর আরাধনা চলছে। সকাল ও সন্ধ্যায় আম, বেলকাঠ দিয়ে চলেছে বিশ্ব শান্তিযজ্ঞ। গোটা কর্মকাণ্ড দেখভাল করছেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবাইত রাজেশ দয়িতাপতি। এখানে রয়েছেন ইসকনের সহ-সভাপতি ও সদ্য নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য রাধারমণ দাস।
তিনি জানান, মূল যজ্ঞের পর কাল সন্ধ্যায় ফুলে সাজানো বিছানায় শোয়ানো হবে জগন্নাথদেবকে। পর দিন পাথরের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলে তা হয়ে উঠবে বিগ্রহ। সনাতন ধর্মে মূর্তি নয়, বিগ্রহের পুজোই দস্তুর। রাধারমণ বলেন, ‘অক্ষয় তৃতীয়ার দিন প্রথমে ভগবানকে সোনা, রুপো ও তামার তার দিয়ে বেঁধে সেই তারকে প্রধান পুরোহিতের কোমরে বাঁধা হবে। তার পর ঘট স্থাপন, কুণ্ড ও শেষে প্রতিবিম্ব।’
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, মহাযজ্ঞের জন্য খাজার পাশাপাশি পেঁড়া, গজা, রসগোল্লা-সহ বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। পুরীতে যে রকম জগন্নাথের প্রসাদ হিসেবে খাজা দেওয়া হয়, তেমনই দিঘার মন্দিরে ঠাকুরের প্রসাদ হিসেবে পেঁড়া ও গজা দেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন দিঘায় পৌঁছেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গণে আসেন। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব কিছুর তদারকও করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘এই জগন্নাথ ধাম নতুন ও পুরোনো প্রজন্মের জন্য নতুন একটা কৃষ্টি ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন হয়ে থাকবে। আধ্যাত্মিকতা ও সম্প্রীতির এক মিলন ক্ষেত্র হতে হয়ে উঠবে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। যাঁরা কাজটা করেছেন, খুব ভালো ভাবে করেছেন।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘সমুদ্রের জন্য দিঘা বিখ্যাত। এখানে বছরভরই লক্ষ লক্ষ পর্যটকের সমাগম হয়। এই মন্দির দিঘার মুকুটে নতুন পালক যোগ করবে, দিঘা আরও উচ্চ শিখরে যাবে। পর্যটকরা যেমন ভ্রমণের জন্য আসবেন, তেমন তীর্থস্থানও দেখে যাবেন তাঁরা।’ মমতা বলেন, ‘আগামী দিনে দিঘা আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠবে।’
পুরীর মতো দিঘার জগন্নাথ মন্দিরেও রয়েছে অরুণ স্তম্ভ। এ দিন বিকেলে ফের মন্দির পরিদর্শন করে ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি আরও এক বার খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, পুলক রায় ও স্নেহাশিস চক্রবর্তী, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। মুখ্যমন্ত্রী জানান, জগন্নাথ মন্দির চত্বরে স্টল হবে। এ ধরনের স্টল চালানোর অভিজ্ঞতা যাঁদের রয়েছে, তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন বলে তিনি জানান।