• ভাঙনে বিপন্ন মৌসুনি দ্বীপ, তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-রিসর্ট
    এই সময় | ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, কাকদ্বীপ: অমাবস্যার কটালে সুন্দরবনের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মৌসুনি দ্বীপের বেহাল মাটির বাঁধে বড়সড় ভাঙন শুরু হয়েছে। রবিবার থেকে মৌসুনির বালিয়াড়ার সল্টঘেরি এলাকার বেহাল মাটির বাঁধ ঢেউয়ের দাপটে ভাঙতে শুরু করেছে। প্রায় ৪০০ ফুট এলাকাজুড়ে বাঁধ উপচে নোনা জল ঢুকছে পাশের লোকালয়ে। ভাঙনের আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে এলাকার ৩০০টিরও বেশি পরিবারের। ভাঙনে দ্বীপের পঞ্চাশটির বেশি ট্যুরিস্ট কটেজ ভাঙনের কবলে। এখনই স্থায়ী বাঁধ তৈরি না হলে বর্ষায় তলিয়ে যাবে বিস্তীর্ণ এলাকা।

    অন্যদিকে, অমবস্যার কটালের জেরে নামখানা ব্লকের দিকে দিকে নদী বাঁধে ধস এবং ফাটল দেখা দিয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘সামনে বর্ষাকাল। সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে লাগাতার বেহাল নদী এবং সমুদ্রের বাঁধ মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছে। যেখানে যেখানে ধস এবং ফাটল দেখা দিয়েছে সেই অংশ দ্রুত মেরামতের পাশাপাশি সংস্কার করা হবে। বেহাল নদী এবং সমুদ্রবাঁধের উপর নজর রেখেছে জেলা প্রশাসনও। পঞ্চায়েত এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছে।’

    মৌসুনি দ্বীপের বালিয়ারা এবং সল্টঘেরি এলাকার বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ মাটির বাঁধ দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে ছিল। বাঁধের মাটির উপর দেওয়া ছিল জিও চট। তীব্র ঢেউয়ে চটের নীচের মাটি ভেঙে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নদী বাঁধ সংস্কার করা হলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একাধিকবার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁধের মাটি ধসে তলিয়ে গিয়েছে নদীতে।

    সম্প্রতি সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছিল। অমাবস্যার কটালের জেরে বঙ্গোপসাগরের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের জেরে রবিবারের পর সোমবার সকালেও তীব্র ঢেউয়ের জেরে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বিস্তীর্ণ বাঁধে ফাটলের পাশাপাশি ধস নামতে শুরু করে। বেশ কিছু অংশে বাঁধের মাটি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের দাবি, ‘সরকার এত এত টাকা খরচ করলেও শুধুমাত্র বাঁধগুলোতে তাপ্পি দিয়ে কাজ শেষ করা হচ্ছে। টাকাগুলো যাচ্ছে কোথায়? কেন নিয়ম মেনে শক্তপোক্ত বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে না? বাঁধ নির্মাণের এক বছরও যায়নি। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসছে আর এই বেহাল মাটির বাঁধে নিয়মিত ধস নামছে। আমরা দিনে রাতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।’

    বাসিন্দারা দাবি তোলেন, সেচ দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এসে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে তদন্ত করে জবাব না দেওয়া পর্যন্ত মেরামতের কাজ চালু করতে দেওয়া হবে না। এক বাসিন্দা মাধবী গায়েন বলেন, ‘নিয়মিত ভাঙনের ফলে বিঘের পর বিঘে জমি সমুদ্রে চলে গিয়েছে। এখন সমুদ্র বাঁধ ভাঙতে ভাঙতে ক্রমশ গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে। চার মাস আগে কোনও রকমের বাঁধটি মেরামত করা হয়েছে।’ স্থানীয়দের সকলেরই অভিযোগ, রাজ্য সরকার বাজেটে নদী বাঁধ মেরামতের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করেছে, সেই টাকা সঠিক ভাবে খরচ হচ্ছে না। সেটা হলে নিশ্চিতভাবে সুন্দরবনের নদী বাঁধগুলিকে স্থায়ী ভাবে মেরামত করা হতো। বর্ষার আগে অবশ্যই এই দ্বীপাঞ্চলের বিস্তীর্ণ সমুদ্র বাঁধ মেরামত করা উচিত বলে মেনে নিয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকরাও।

  • Link to this news (এই সময়)