• দুর্গাপুর ব্যারাজের রাস্তা সংস্কার নিয়ে দুশ্চিন্তায় সেচমন্ত্রী
    এই সময় | ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, দুর্গাপুর: দুর্গাপুর ব্যারাজের উপরে রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ করতে হবে ১৫ জুনের মধ্যে। তার পরে বর্ষা শুরু হয়ে যাবে। তখন কাজ করা যাবে না। অর্থাৎ হাতে আছে মাত্র ৪৭ দিন। সংস্কারের কাজে যুক্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা জানিয়েছে, রাস্তার উপরে লোহার জয়েন্টগুলি খুলে ফের নতুন করে লাগাতেই ৭৫ দিন লাগবে। যার অর্থ, বর্ষার আগে কোনও ভাবেই রাস্তার কাজ শেষ করা যাবে না।

    সোমবার দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শন করতে এসে বিশেষজ্ঞ সংস্থার এমন কথা শোনার পরে রাজ্যের সেচ দপ্তরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার কপালে কার্যত চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারই মধ্যে বাঁকুড়া জেলা সেচ দপ্তরের একাধিক আধিকারিক এ দিন ব্যারাজে না আসায় বেজায় চটে যান মন্ত্রী। জরুরি ভিত্তিতে তাঁদের তলব করার নির্দেশও দেন তিনি।

    সমস্যা এখানেই শেষ নয়। ব্যারাজের উপরের রাস্তার সংস্কারের সময় যান চলাচলে যাতে কোনও অসুবিধা না–হয়, তার জন্য ডাউনস্ট্রিমে দামোদরের উপরে একটি বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সে রাস্তার চার জায়গার উপর দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রীকেই পরনের ধুতি কিছুটা তুলে জল বয়ে যাওয়ার একটি জায়গা লাফ দিয়ে পার হতে হয়েছে। বিকল্প রাস্তার এমন হাল দেখে তিনি বলেই ফেলেন, ‘এ রাস্তা দিয়ে বাস ও বড় গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু দু’চাকার কোনও যান ঢুকে পড়লে যে কোনও সময়ে বিপদ ঘটতে পারে।’ তার পর মন্ত্রী ফিরে যেতেই আপাতত বিকল্প ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ দিন সন্ধে থেকে ব্যারাজের রাস্তা ধরেই যান চলাচল

    সঙ্গত কারণে মন্ত্রী জানতে চান, বিকল্প এই রাস্তার উপর দিয়ে কেন জল বয়ে যাচ্ছে? সেচ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘ব্যারাজের লকগেট বন্ধ রয়েছে, কিন্তু নদীর একাধিক জায়গা থেকে জল বেরোচ্ছে। সেটাই রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। যে জায়গায় জল বইছে, সেখানে কংক্রিটের ব্লক বসানো হয়েছে। পাথর দিয়ে দু’টি ব্লকের মধ্যে ফাঁকা জায়গা ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।’

    সেচ দপ্তরের আধিকারিক ও বাঁকুড়া জেলার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারির সঙ্গে আলোচনার পরে মন্ত্রী বলেন, ‘সেচ দপ্তর ও পিডব্লিউডি দপ্তরের দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। প্রয়োজনে শিবপুর ও যাদবপুর কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেব। দরকার হলে ১৫ জুনের মধ্যে যতটা সম্ভব কাজ শেষ করা হবে। বাকি কাজ পরে করা হবে।’

    দুর্গাপুর ব্যারাজের উপরে ব্রিজের সঙ্গে আটটি জেলার যোগ রয়েছে। এর মধ্যে ব্যারাজের উপর দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছে। মেজিয়া ও বর্ধমান সদরঘাট হয়ে ট্রাক ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একমাত্র বাস চলছে। ছোট গাড়ি বিকল্প রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে।’ ব্যারাজের উপরের রাস্তার আমূল সংস্কার করতে হলে প্রায় দু’মাস সমস্ত ধরনের যান চলাচল বন্ধ করার কথা আগেই জানিয়েছিল সেচ দপ্তর। এ দিন মন্ত্রীকে তিস্তা ব্যারাজের উপরে রাস্তার সংস্কারের উদাহরণ দিয়ে সেচ দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, সেই ব্যারাজের উপরে রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রায় চার মাস সমস্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু দুর্গাপুরে তা সম্ভব হচ্ছে না।

    তা হলে দুর্গাপুর ব্যারাজের উপরে রাস্তা সংস্কারের কী হবে? মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘এর আগে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। প্রয়োজনে আবার বৈঠকে বসব। মুখ্যমন্ত্রী এই রাস্তা সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)