• বালি-পাথরেই মূল বিপদ! পলি ঠেকাতে বিশেষজ্ঞ কমিটি
    এই সময় | ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: তিস্তার পলিই এখন শিলিগুড়ি পুরসভার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। তিস্তা-মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানালে জল আসে গজলডোবা হয়ে তিস্তা নদী থেকে। পলি জমে জমে সেই লিঙ্ক ক্যানালের বেহাল অবস্থা। ইনটেক ওয়েলে নেওয়ার মতো জলই পাওয়া যাচ্ছে না লিঙ্ক ক্যানাল থেকে। পলিতে ভরাট হয়ে গিয়েছে। নয়া পানীয় জল প্রকল্পে গজলডোবা থেকে সরাসরি পাইপে জল আনা হচ্ছে নতুন একটি ইনটেক ওয়েলে। কিন্তু পলির কী হবে? পাহাড়ি নদী থেকে জলের পাশাপাশি স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসে বালি এবং পাথর। পানীয় জল প্রকল্পে চালাতে এখন সেই পলিই প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    তিস্তায় ভেসে আসা ওই বালি পাথরে জেরবার জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগমও। তিস্তা ক্যানাল জল প্রকল্প প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে ওই জলের সঙ্গে ভেসে আসা বালি-পাথরে। মোট ন'টি ইউনিটের মধ্যে এক দিনে গড়ে চলে একটি করে ইউনিট। ওই পলি বিনে পয়সায় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার পরেও ক্যানাল থেকে সরাতে আগ্রহ নেই কোনও সংস্থার। এই অবস্থায় নিজেদের পানীয় জল প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিলিগুড়ি পুরসভা বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর, কেএমডিএ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, সেচ দপ্তরের পাশাপাশি আর কাদের ওই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে রাখা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি, নতুন একটি জলাধার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে যেখানে অন্তত আটচল্লিশ ঘণ্টা জল ধরে রাখা যাবে। তাতে পলি জলাধারের নীচে জমা হয়ে যায়।

    সোমবার এ ব্যাপারে পুরসভায় একটি জরুরি বৈঠকের পরে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, 'পাহাড়ে ভারী বর্ষা হলে নদীতে ঘোলা জল বাড়ছে। তাতে আমাদের প্রকল্পে পলি জমা হচ্ছে। এই কারণেই মাঝে একদিন জল সরবরাহে সমস্যা হয়। এখন ঠিক আছে। কী ভাবে এই সমস্যা মেটানো যায় সেটা দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরির কথা ভাবা হয়েছে।'

    বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি ছাড়াও বর্তমান প্রকল্পের তিস্তা-মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানালের ইনটেক ওয়েল থেকে বালি সরানোর জন্যও রাজ্য সরকারের কাছে সেচ দপ্তর কোটি টাকা চেয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই পলি ফেলা হবে কোথায়? সচরাচর নদীগর্ভে জমা বালি সরাতে সেগুলি রাস্তা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এর বাইরে বৃহৎ সরকারি প্রকল্পের জমি ভরাটের কাজেও ব্যবহার করা হয়। বাগডোগরায় বিমান বন্দরের সম্প্রসারণের কাজ চলছে। পুরসভার পক্ষ থেকে বাগডোগরা বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিনে পয়সায় ওই পলি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পলির গুণমান নিয়ে সংশয় থাকায় তাঁরা রাজি হননি বলে পুরসভা সূত্রে খবর। তাঁরা অন্য একটি নদী থেকে বালি তুলছেন।

    ফলে গজলডোবায় নতুন একটি জলাধার তৈরি ছাড়া অন্য বিকল্প নেই পুরসভার। কিন্তু ক্যানালের সমস্যা অধরাই রয়ে গিয়েছে। নতুন প্রকল্প চালু না-হওয়া পর্যন্ত আরও ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি ডিপ টিউবওয়েল বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি ১৩টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরি করে সমস্যা মেটানোর কথা ভাবা হয়েছে। মেয়র বলেছেন, 'পরিশ্রুত জল পাওয়াটা নাগরিকদের অধিকার। সেই লক্ষ্যে আমরা সমস্ত রকম ভাবে চেষ্টা করছি।'

  • Link to this news (এই সময়)