সৌরভ মাজি, বর্ধমান: অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের (Digha Jagannath Temple) দ্বারোদঘাটন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। জগন্নাথ মন্দির ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বর্ধমানের বিজেপি নেতা। এলাকায় বিডিও কার্যালয়ের বাইরে বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিনে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের যজ্ঞ ও উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরকারি আধিকারিকরাও হাজির ছিলেন। সেখানে হাজির হলেন বিজেপির জামালপুর মণ্ডল সভাপতি প্রধানচন্দ্র পাল। গতকাল বর্ধমানে গিয়ে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দিঘার নবনির্মিত মন্দিরে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। ভগবানকে নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। সেই কথাও বলেছিলেন। এবার সেই পথেই কি হাঁটলেন বিজেপির এই মণ্ডল সভাপতি? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দিঘার মন্দিরে যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠান কার্যত বয়কটের ডাক দিয়েছেন। এই মন্দির নিয়ে একাধিক তির্যক মন্তব্যও করছেন। তাহলে কি বিরোধী দলনেতার উলটো পথেই হাঁটলেন এই বিজেপি নেতা? সেই প্রশ্ন উঠেছে ওয়াকিবহাল মহলে।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দিঘায় গড়ে তোলা হয়েছে জগন্নাথ মন্দির। গত কয়েকদিন ধরে চলছে মন্দির উদ্বোধনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শুরু হয়েছে মহাযজ্ঞ। আজ মঙ্গলবার মহাযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে এই মন্দির নির্মাণ ও উদ্বোধন নিয়ে বিরোধিতা করে চলেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের ডাকও দিয়েছেন। এমনকী দিঘার জন্য স্পেশাল ট্রেন আচমকা চলবে না বলে রেল ঘোষণা করেছে। যা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসক দল। শুভেন্দু কলকাঠি নাড়াতেই রাজ্যবাসীকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়া আটকাতে ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার বর্ধমান জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা-কে পাশে বসিয়ে দিলীপ বলেছেন, “আমিও সুযোগ পেলে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির (Digha Jagannath Temple) যাব। জগন্নাথদেব এত দূর এগিয়ে এসেছেন। আমরা যেতে পারব না কেন?” সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “জগন্নাথদেবের বৈশিষ্ট্য হল, তার বড় বড় চোখ রয়েছে। তিনি সব কিছু দেখছেন।” একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, “দেবতাকে নিয়ে রাজনীতি নয়। মন্দির নির্মাণ করে কেউ যদি ভাবে ভোট বৈতরণী পেড়িয়ে যাবেন তাহলে ভুল ভাবছেন। রামমন্দির নির্মাণ করে বিজেপির ভোট বাড়েনি। কমে গিয়েছে। তাই জগন্নাথ মন্দির তৈরি করে ভোট বাড়বে না। জগন্নাথ সব দেখছেন।”
দিলীপের সুরেই জামালপুরের মণ্ডল সভাপতি প্রধানচন্দ্র পালও মন্দির দর্শন করতে চান। জামালপুর বিডিও কার্যালয়ে গিয়ে জায়ান্ট স্ক্রিনে দিঘার মন্দিরের অনুষ্ঠান দেখেছেন তিনি। প্রধানচন্দ্র পাল বলেন, “আজ পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে গর্ব অনুভব করছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন তা গর্বের বিষয়। সরাসরি সম্প্রচারের যে ব্যবস্থা প্রশাসন করেছে, সেখানে থাকতে পেরে আমিও অনুপ্রাণিত। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যাতে পুরোপুরি নির্মূল হয়, সেটাও দেখতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “পুরী অনেকটা দূরে হওয়ায় অনেকেই যেতে পারেন না। দিঘায় মন্দির হওয়ায় রাজ্যের বহু মানুষ যেতে পারবেন। ধর্মীয় স্থান দর্শন করতে পারবেন, ধর্মীয় আলোচনা করতে পারবেন। সব ধর্মকে যথাযথ সম্মান দিয়ে রাজ্যবাসী যাতে চলতে পারে, সেই কামনা করি।”
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জামালপুর ব্লক সভাপতি মেহমুদ খান বলেন, “দিঘার মন্দিরে যাতে রাজ্যবাসী যেতে না পারে, সেজন্য ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জামালপুরের বিজেপির কার্যকর্তা যারা ধর্মকে বিশ্বাস করে, মন থেকে উন্নয়নকে ভালবাসে তার নজির কিন্তু এখানে দেখা গেল। বিরোধীদলের অনেক রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দিঘার মন্দিরের কর্মযজ্ঞ দেখছেন। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, দলের মানুষকে এক সূত্রে বেঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দিঘার মন্দিরে দর্শনার্থীদের আটকাতে কেন্দ্রের চক্রান্ত সকলেই দেখছে পাচ্ছে। মানুষ ওদের মুখোশটা ধরে ফেলেছে।”