• ঝন্টু শেখের বাড়ি থেকে ৬ কিমি দূরে সভা করে ফিরলেন শুভেন্দু! শহিদের বাবার হাতে দিলেন ২ লক্ষ
    আনন্দবাজার | ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • কথা ছিল, কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত নদিয়ার পাথরঘাটার সেনা জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে যাবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে মঙ্গলবার ঝন্টুর বাড়ি থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে তেহট্টের জিৎপুরে সভা করে শহিদের বাবার হাতে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে ফিরে আসেন তিনি। বিজেপির একটি সূত্রে খবর, শহিদ পরিবারের ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যা’র কথা জানতে পেরেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শুভেন্দু।

    উধমপুরে শহিদ হওয়া ঝন্টুর বাবা সাবুর আলি শেখ মঙ্গলবার দুপুরে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দুদের আয়োজিত মঞ্চে। সেখানে ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জঙ্গিহানায় নিহত হাঁসপুকুরিয়ার সুদীপ বিশ্বাস, ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে টি-৯০ ট্যাঙ্কের ব্যারেল বিস্ফোরণে নিহত সুকান্ত মণ্ডল এবং ২০২০ সালে জম্মুতে নিহত রঘুনাথপুরের জওয়ান সুবোধ ঘোষের পরিবারকেও ২ লক্ষ টাকা করে সাহায্য করেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘ঝন্টু আলি শেখের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পরিবারকে সহায়তার কথা জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ। কিন্তু আমরা অন্য তিন শহিদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের। কিন্তু রাজ্যবাসীর জন্য তাঁর দুটো চোখ খোলা রাখা দরকার। একটা চোখ বন্ধ থাকবে না। সকলের দিকে সমান নজর দেওয়ার প্রয়োজন।’’

    বস্তুত, উধমপুরে নিহত সেনা কমান্ডো ঝন্টুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন বিরোধী দলনেতার ‘দেরি’ হল, তা নিয়ে কটাক্ষ করে বিরোধীরা। ঝন্টুর মৃত্যুর পরে নদিয়ার তেহট্টে তাঁর বাড়িতে বিজেপি নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ করে শাসকদল তৃণমূল থেকে বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস। তাদের দাবি, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়েছেন বিজেপির নেতারা। কিন্তু ঝন্টু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছিলেন বলে তাঁর বাড়িতে যাননি শুভেন্দু। যদিও তেহট্টের মঞ্চ থেকে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, ঝন্টুর দেহ আসার পর তাঁর বাড়িতে বিজেপির স্থানীয় নেতারা গিয়েছিলেন। তিনি নিজেও যেতেন। কিন্তু তিনি মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়েছিলেন। সে জন্য গত শনিবার উপস্থিত থাকতে পারেননি।

    তেহট্টে সভা করে শহিদদের পরিবারের হাতে অর্থ তুলে দেওয়ার সময় ঝন্টুর বাবাকে প্রণাম জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘শহিদ ঝন্টু শেখের বাবা এসেছেন। আমি তাঁকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁদের পাশের থাকার আশ্বাস দিচ্ছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ঝন্টু-সহ এখানকার চার জন শহিদ হয়েছেন দেশের জন্য। এই মাটিকে প্রণাম জানাচ্ছি। সর্বদা আমরা একটা জিনিসে বিশ্বাস করি— আগে দেশ। ঝন্টু আলি শেখের দেহ মর্যাদার সঙ্গে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে কেন্দ্র, শ্রদ্ধার সঙ্গে অন্তিম কার্যকলাপ হয়েছে।’’ পাশাপাশি, ঝন্টুর পরিবারের উদ্দেশে তিনি জানান, কেন্দ্রের সাহায্যের পরেও তাদের যে কোনও রকম সাহায্যের প্রয়োজন হলে, সেটা শুভেন্দু দেখবেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ জন্য কৃষ্ণনগর বা কলকাতা যাওয়ার দরকার নেই। এখানকার প্রতিনিধিদের জানালেই হবে। আমি সর্বতোভাবে পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা রাষ্ট্রবাদে বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের জন্য যাঁরা কৃচ্ছ্রসাধন করেন, ত্যাগস্বীকার করেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা আছি।’’

    পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর সমাজমাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট করা নিয়ে মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, অন্য কোনও রাজ্যে এমনটা হচ্ছে না। অসমে হয়েছিল, কিন্তু অসমের পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তিনি বলেন, ‘‘নাকাশিপাড়া, শান্তিপুর থেকে জঙ্গিদের ছবি দিয়ে পোস্ট করছে। যাঁরা ‘প্রো-পাকিস্তানি’ পোস্ট করছেন তাঁদের ভাল করে উত্তরপ্রদেশের দাওয়াই দরকার। কিন্তু এখানকার সরকার ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করে। তুষ্টিকরণের রাজনীতি করে। আমরা চার জন শহিদকে সাধ্যমতো সাহায্য করলাম। শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করলাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর একটা চোখ বন্ধ।’’ দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন এবং আমন্ত্রণ সত্ত্বেও তাঁর অনুপস্থিতির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কাঁথির বাসিন্দা শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘ওটা মন্দির নয়, সরকারি টাকায় মন্দির হয় না। ওটা কালচারাল সেন্টার (সাংস্কৃতিক কেন্দ্র)।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)