নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: সালানপুর থানার বাঁশকেটিয়ায় রাস্তার উপর যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্যভেদ করল পুলিস। ৩৫বছরের দীনেশচন্দ্র রায়কে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তাঁরই বন্ধু বিরজু হাঁসদার বিরুদ্ধে। পুলিসের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, সোমবার রাতে মদ্যপান করে বিরজুর বাড়ি ঢোকেন দীনেশ। তারপর বন্ধুর জন্য রাখা ভাজা মাছ খেয়ে নেন। বাড়ি ফিরে স্ত্রীর কাছে মাছ খেয়ে নেওয়ার বিষয়টি জেনেই বন্ধুকে বিরজু মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। মারধর করার পর সে বাড়ির সামনের কলতলার ঢালাই মেঝেতে মাথা ঠুকে দেয়। মারা গিয়েছে বুঝতে পেরে বিরজুই বন্ধুর দেহ রাস্তার সামনে ফেলে দিয়ে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় মদের কারবারের রমরমা। তারই পরিণতিতে এই মৃত্যু। এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন গ্রামের মহিলারা। তাঁদের অভিযোগ, আদিবাসী এলাকায় বাড়ি বাড়ি মদ বিক্রি হচ্ছে। আদিবাসীদের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী যুবক-যুবতীরাও মদের টানে এলাকায় ভিড় করছেন। অতিরিক্ত মদের কারবারও এই খুনের পিছনে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।
দীনেশের বাবা সিনেমা রায় ইসিএলের কর্মী ছিলেন। বাঁশকেটিয়া লাগোয়া রামচন্দ্রপুরে তাঁদের পৈতৃক মাটির বাড়ি ছিল। ক’বছর আগে গ্রামের অন্যদিকে বড় বাড়ি বানিয়ে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। বাড়ির ছোট ছেলে দীনেশ বিবাহিত। এলাকায় দিনমজুরের কাজ করলেও তাঁর বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো। দিনমজুরের কাজ করার সূত্রেই বিরজুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। পরিবার ও এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিবাসী পাড়ায় প্রায়ই দুই বন্ধু একসঙ্গে মদ খেত। বিরজুর বাড়ি যাতায়াত ছিল দীনেশের। সোমবার রাতেও বিরজুর বাড়ি গিয়েছিলেন দীনেশ। তারপর বাড়ি ঢোকে বিরজু। এরপরই হত্যাকাণ্ড হয়। জানা গিয়েছে, ভাজা মাছ ও ভাত খেয়ে নেওয়ার জেরেই উত্তেজিত হয়ে বন্ধুকে মারধর শুরু করে বিরজু।
যদিও পুলিসের জেরায় সে দাবি করেছে, তার স্ত্রীর সঙ্গেও অশালীন আচরণ করেছিল দীনেশ। খুনের পরই বিরজু এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়।
এদিকে, রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিস। পুলিস প্রথমেই দেহ উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায়। তারপরই বিরজুর বাড়িতে অভিযান চালায়। তার বাড়িতেই খুনের প্রমাণ পায় পুলিস। বিরজু বাড়ি না থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিস। এরপরই গ্রেপ্তার হয় বিরজুও।
যিনি খুন হয়েছেন, তাঁর দু’টি নাবালক সন্তান রয়েছে। আবার যে খুন করেছে, তারও দু’টি নাবালক সন্তান রয়েছে। স্ত্রী অসুস্থ। এভাবে দু’টি পরিবারের পথে বসার পিছনে এলাকার মানুষজন মদের রমরমা কারবারকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, দু’জন অতিরিক্ত মদ খেয়ে না থাকলে হয়তো এই ঘটনাই ঘটত না। মৃতের বাবা সিনেমা রায় বলেন, ছেলে কোনও ভুল করে থাকলে আমাদের এসে বলতে পারতো। কিন্তু, একেবারে প্রাণেই মেরে ফেলল! আমাদের এলাকায় মদের রমরমা কারবার। ছেলেও মদ খেত। আমরা চাই, এই কারবার বন্ধ করা হোক। না হলে আমার মতো অনেকেই সন্তানহারা হবে। গ্রামের মহিলা সারথী রায়, রিনা রায় বলেন, বাড়ি বাড়ি মদ বিক্রি হচ্ছে। অল্পবয়সি ছেলেরাও মদ খাওয়া শুরু করছে। পুলিস পদক্ষেপ না নিলে আমরা প্রতিবাদে নামব। ডিসি সন্দীপ কাররা বলেন, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র