গুজরাতে পুলিসি হেনস্তার শিকার বাংলার শ্রমিকরা, নথি যাচাইয়ের অজুহাতে আটক
বর্তমান | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, ডোমকল: ওড়িশার পর এবার গুজরাতেও হেনস্তার শিকার বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। তবে ওড়িশায় যেমন তাঁদের শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছিল, এখানে তা না হলেও পুলিস তাঁদের তুলে নিয়ে গিয়ে টানা তিনদিন থানায় আটকে রাখে। অভিযোগ, বাংলাদেশি সন্দেহেই তাঁদের সঙ্গে ওই ব্যবহার করা হয়। গুজরাতের ওলপাড থানা এলাকায় মুর্শিদাবাদ জেলার ইসলামপুর, ডোমকল, রানিনগরের বহু শ্রমিক টাইলসের কাজ করেন। অভিযোগ, তাঁরা বাংলাদেশি কি না, তা যাচাই করতে গত শনিবার স্থানীয় থানার পুলিস একাধিক নথি দেখতে চায়। পরিযায়ী শ্রমিকরা আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখালেও সন্তুষ্ট হননি পুলিস আধিকারিকরা। তাঁরা শ্রমিকদের থানায় তুলে নিয়ে যান। বলেন, বাড়ি থেকে জন্মের শংসাপত্র আনাতে হবে। শ্রমিকরা ফোনে বাড়ির লোকেদের সে কথা জানালে তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেসব জোগাড় করতে। জন্মের শংসাপত্র না আসা পর্যন্ত থানায় আটকে রাখা হয় বাঙালি শ্রমিকদের। পরিবারের তরফে সমস্ত কাগজপত্র পাঠানোর পর মঙ্গলবার সকালে তাঁদের ছাড়া হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত ৩০ জন পরিযায়ী শ্রমিক এই হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরে আসছেন। চিন্তিত তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। ওলপাড থানায় আটকে থাকা শ্রমিকরা জানিয়েছেন, থানায় প্রথম দিন পুলিসের তরফে তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তারপর বাকি দু’ দিন পুলিস আর তাঁদের খাবারের দায়িত্ব নেয়নি। স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে তাঁদের জন্য খাবার পাঠানো হতো। এদিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের তরফে স্থানীয় পুলিস-প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানানো হলে তাঁরা গুজরাতের পুলিস-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। পাশপাশি এগিয়ে আসে পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ নামে একটি সংগঠন। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় মঙ্গলবার সকালে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ছাড়া হয়। প্রশ্ন উঠছে, ওই শ্রমিকদের কি গ্রেপ্তার করে হয়েছিল? যদি গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে তাহলে কেন তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়নি? তা না হলে, কোন আইনে ২৪ ঘণ্টার বেশি তাঁদের থানায় আটকে রাখা হল?
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সভাপতি মহম্মদ রিপন বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের টার্গেট করে হচ্ছে। তাঁদের কাছে ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরেও হেনস্তা করা হচ্ছে।
ডোমকলের সাহাবাজপুরের অসীম আখতার বলেন, ওখানে আমার মামা সহ গ্রামের বেশ কয়েকজন আছেন। মামাদের রীতিমতো হেনস্তা করা হয়েছে। ভারতীয় পরিচয় পত্র দেখালেও তা মানতে চাননি সেখানকার পুলিসকর্তারা। মঙ্গলবার সকালে মামাদের ছাড়া হয়। আমার বাবাও ওখানে থাকেন। আমরা ভীষণ ভীত। অনেকেই ভয়ে বাড়ি ফিরছেন। ওলপাড এলকায় কর্মরত শ্রমিক হাসানুজ্জামান বলেন, শনিবার আমাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে আমাদের ছাড়া হয়েছে। সমস্ত পরিচয়পত্র দেখেছে। যদিও তাঁরা আমাদের চিন্তা না করার কথা বলেছেন। তবুও ভয় যাচ্ছে না।