নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: দিল্লির নেতাদের কাছে পয়েন্ট বাড়াতে এখন প্রতিযোগিতা চলছে বিজেপির বঙ্গ-ব্রিগেডে। এর আগে দুর্নীতি, সন্দেশখালি, আর জি কর, চাকরি বাতিলের ইস্যুতে লাগাতার রাজ্য সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলার চেষ্টা করেছিলেন গেরুয়া নেতারা। দুর্নীতি, সন্দেশখালি ভোটে ডিভিডেন্ট দিতে পারেনি। পরে আর জি কর, বর্তমানে চাকরি বাতিলের ইস্যুও বাংলায় সংগঠন প্রসারে কার্যকর হয়নি সেভাবে। ফলে, এখন বিজেপির কাছে একটাই পথ খোলা—আড়াআড়ি বিভাজন। এটা দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরও কৌশলগত অবস্থান বলেও অভিমত রাজনৈতির মহলের। তাই, হাতে গরম সামশেরগঞ্জ ইস্যুকে অস্ত্র করে দিল্লির নেতাদের ‘প্রিয়পাত্র’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন রাজ্যস্তরের একাধিক নেতা। সেই কারণেই সম্ভবত পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা ও সামশেরগঞ্জকে একসূত্রে গেঁথে পৃথক পৃথক কর্মসূচি নিচ্ছেন তাঁরা। গেরুয়া নেতাদের এহেন ভূমিকা নজর এড়িয়ে যায়নি রাজনীতির কারবারিদের।
কেন্দ্রের ওয়াকফ বিলের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠে সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান। ভাঙচুর থেকে শুরু কয়েকজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। ঘটনার পর পরই বিজেপির রাজ্য নেতারা ধর্মীয় তাস হাতে নেমে পড়েন ময়দানে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লাগাতার কর্মসূচি নিচ্ছেন তাঁরা। মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাঁদের গলা জড়িয়ে ছবি তুলে কলকাতায় ফিরে যাচ্ছেন। কে কত বেশি সামশেরগঞ্জে আসছেন, ছবি তুলছেন, সেটাই দিল্লির নেতাদের দেখাতে চেষ্টার শেষ নেই পদ্ম শিবিরের প্রথম সারির নেতাদের। সামশেরগঞ্জের পরিস্থিতির এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। ঘর ছাড়ারা ঘরে ফিরেছেন। প্রশাসনের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। অথচ, এলাকায় গিয়ে বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘আমরা পাশে রয়েছি।’ কিন্তু সেটা কীভাবে, তা কেউই স্পষ্ট করেননি। এনিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। ক’দিন আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এলাকায় এসে বিএসএফের স্থায়ী ক্যাম্পের দাবি তোলেন। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিজেপির মহিলা বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীও এলাকায় ঘোরেন। পরে বিরোধী দলনেতাও দলবল নিয়ে এলাকায় আসেন। কিছুটা দেরিতে হলেও মঙ্গলবার বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ধুলিয়ানে আসেন। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা নেতাদের নিয়ে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। আজ, বুধবার ফের সামশেরগঞ্জে আসার কথা ছিল সুকান্তবাবুর। কিন্তু কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক থাকার কারণ দেখিয়ে কর্সসূচি বাতিল করেন। তবে, খুব তাড়াতাড়ি মুর্শিদাবাদ আসবেন বলে ঘোষণা করবেন সুকান্তবাবু। এমনটাই দলীয় সূত্রে খবর।
লক্ষ্যনীয় ঘটনা হল, বঙ্গ বিজেপির প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই সামশেরগঞ্জে এলেও পৃথক পৃথক ভাবে কর্মসূচি নিচ্ছেন। দলীয় স্বার্থে যৌথভাবে কেউই কোনও কর্মসূচির ধার ধারছেন না। যে যাঁর নিজের মতো করে আসছেন, চলে যাচ্ছেন। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, বাংলায় সরকার বিরোধী একাধিক ইস্যু থাকা সত্ত্বেও সংগঠন মজবুত করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন ও হচ্ছেন বঙ্গের নেতারা। বিষয়টিকে খুব ভালোভাবে নিচ্ছিলেন না দিল্লির নেতারা। এখন সামশেরগঞ্জকে সামনে রেখে দিল্লির নেতাদের আস্থা ফিরে পেতে মরিয়া তাঁরা। তাই নিজেদের মধ্যে এহেন প্রতিযোগিতা!
তবে, দিলীপবাবু এদিন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে বলেন, ‘মুর্শিদাবাদের মানুষের পাশে আমরা একসঙ্গে রয়েছি। বাড়িতে বাড়িতে আমাদের নেতারা যাচ্ছেন। আমাদের রাজ্য সভাপতি এর আগেও এসেছেন, তিনি আবার আসছেন। আমিও এসেছি। এখানকার হিন্দুদের জন্য আমরা সকলে রয়েছি।’ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘অনেকেই চাইছে এই ইস্যুকে নিয়ে রাজনীতি করতে। কিন্তু আমরা দল-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের পাশে রয়েছি।