নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: রামলালের পিছনের ডান পায়ে গভীর ক্ষত। সেই ক্ষত নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে যন্ত্রণাকাতর রামলাল। এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ঝাড়গ্রামজুড়ে। জেলাবাসীর প্রিয় এই হাতিকে কে বা কারা আঘাত করল, আর কেনই বা করল তা নিয়ে চলছে চর্চা। তবে আশার কথা, ইতিমধ্যেই বনবিভাগ রামলালের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। কীভাবে আঘাত লাগল তা জানতে তদন্তও শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, রামলাল হল ঝাড়গ্রামের রেসিডেন্সিয়াল হাতি।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, রামলালের পিছনের ডান পায়ে একটি ক্ষত দেখা গিয়েছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলাগাছের ভেতরে ওষুধ ঢুকিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। ক্ষতস্থানে তরল ওষুধ লাগানো হয়েছে। দপ্তরের কর্মীরা রামলালের সুস্থতা পর্যন্ত নজরদারি চালাবে। রামলালের পায়ে ক্ষত কীভাবে হল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। বাইশ সালে রামলালের পিঠে লোহার ফলা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে বার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়। কে বা কারা লোহার ফলা ঢুকিয়ে দিয়েছিল তা আজও জানা যায়নি। গত বছর জেলা শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে জ্বলন্ত লোহার শলাকার আঘাতে অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী হাতির মৃত্যু হয়েছিল। রাজ্যজুড়ে যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। অমানবিক সেই ঘটনা ঘিরে সকল স্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
নয়াগ্ৰামে কিছুদিন আগে অল্পবয়সি দু’টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে বন বিভাগের তরফে এখনও মুখ খোলা হয়নি। ঝাড়গ্রাম জেলাজুড়ে হাতির হানায় একের পর এক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। একই সঙ্গে হাতির ওপর হামলার ঘটনাও বাড়ছে। হামলার জেরেই রামলালের পায়ে জখম কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। লোধাশুলি রেঞ্জের কেঁওদিশোল গ্রাম সংলগ্ন কাজু বাগানে রামলাল কিছুদিন ধরে আস্তানা গেড়েছিল। রাত হলেই খাবারের সন্ধানে ধানের জমিতে, গৃহস্থের বাড়িতে হানা দিচ্ছিল। পুকুরে নেমে জলের মধ্যে তাকে দীর্ঘক্ষণ থাকতেও দেখা গিয়েছে। রামলাল এখন জখম নিয়ে জোয়ালভাঙ্গার জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বন বিভাগের কর্মীরা রামলালের চিকিৎসার জন্য সেখানে আছেন। ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের প্রাক্তন আধিকারিক সমীর মজুমদার বলেন, জ্বলন্ত লোহার শলাকার আঘাতে ক্ষত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। দহিজুড়ি বিট সংলগ্ন এলাকায় কিছুদিন আগে দলছুট কয়েকটি হাতির দিকে একদল মানুষকে লোহার ছোট বল ছুড়তে দেখেছিলাম। স্থানীয় মানুষেরা হাতিকে সাধারণত বিরক্ত করে না। ফসলের ক্ষতি হলে বড় জোর তারা তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ইদানিং হাতিকে নানাভাবে উত্যক্ত করার প্রবণতা বাড়ছে। বনবিভাগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। বন ও বন্য প্রাণী সুরক্ষা আন্দোলনের কর্মী শ্যামসুন্দর মাহাত বলেন, রামলাল জঙ্গলের থেকে লোকালয়ে বেশি থাকে। রামলালের গায়ে আগেও লোহার ফলা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন যে ক্ষত চিহ্ন তৈরি হয়েছে তা জ্বলন্ত লোহার শলাকার আঘাতেই হয়েছে বলে মনে করছি। হাতিদের ওপর বারবার নিষ্ঠুর আঘাত করা হচ্ছে। বনদপ্তররে উদাসীনতায় এমন ঘটনা ঘটছে। ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের এক কর্তা বলেন, অন্য দাঁতাল হাতির সঙ্গে মারামারির জেরে আঘাত পেতে পারে। আবার লোহার জ্বলন্ত শলাকার আঘাতেও ক্ষত হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। -নিজস্ব চিত্র