• চিৎপুর মোড় সংলগ্ন হোটেলে আগুন, প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপ, মৃত কর্মী, নিখোঁজ বেশ কয়েকজন
    বর্তমান | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাতের শহরে ফের অগ্নিকাণ্ড। মঙ্গলবার রাতে আচমকা আগুন লাগে জোড়াসাঁকোর চিৎপুর মোড়ের কাছে একটি ছ’তলা হোটেলে। আতঙ্কিত হয়ে চারতলা থেকে ঝাঁপ দেন দুই ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে ও অপরজন গুরুতর আহত বলে জানা গিয়েছে। মৃতের নাম মনোজ পাসোয়ান। সম্ভবত তিনি ওই হোটেলের কর্মী। অপর কর্মী সঞ্জয় দাস গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর মাথায় যথেষ্ট আঘাত লেগেছে। হাত এবং পায়েও গভীর চোট রয়েছে বলে খবর। দমকলের ১১টি ইঞ্জিন ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলেও মাঝরাত পর্যন্ত ‘পকেট ফায়ার’ নেভানোর কাজ চলে। পাশাপাশি, হোটেলের ঘরে থাকা লোকজনকে উদ্ধার করতেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ওই হোটেলে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছিল না। কীভাবে আগুন লেগেছিল, তা স্পষ্ট নয়। তবে, দমকল ও পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, চারতলায় ইলেকট্রিক মিটার থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার জেরে ছ’জনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আরও ২৫ জনকে হোটেল থেকে উদ্ধার করেন দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা। রাতেই ঘটনাস্থলে যান মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও কলকাতা পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা। এদিন গভীর রাতে আরও দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পাশাপাশি, আরও দু’টি শিশুকে অচৈতন্য অবস্থায় হোটেল থেকে বার করা হয়েছে। তাদের দাদুও ওই হোটেলে ছিলেন। ওই বৃদ্ধ সহ আরও বেশ কয়েকজনের খোঁজ মিলছে না। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

    চিৎপুর মোড় সংলগ্ন ৬, মদনমোহন বর্মন স্ট্রিটের বহুতল হোটেলে যখন আগুন লাগে, বহু মানুষ তখন ভিতরেই ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। একতলার ঘরে থাকা লোকজন প্রাণভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। প্রথমে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন। পরে দফায় দফায় আরও ছ’টি ইঞ্জিন পাঠানো হয়। গোটা এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। হোটেলের ঘরে আটকে পড়েন অনেকে। তাঁদের উদ্ধারে নামেন দমকলকর্মী থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিসের বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা। 

    আতঙ্কিত হয়ে ওই বিল্ডিংয়ের জানালার বাইরে এসে কার্নিশ থেকে ঝাঁপ দেন দুই ব্যক্তি। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আরও ছ’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গিয়েছে, ঝাঁপ দেওয়া দু’জনের মধ্যে মনোজকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। অপর ব্যক্তি সঞ্জয়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। 

    দমকলের সঙ্গে উদ্ধার কাজে হাত লাগান স্থানীয়রাও। হোটেলের যে অংশে আগুন লাগে, তার উল্টোদিক দিয়ে দড়ি বেঁধে বাসিন্দাদের বাইরে বের করার ব্যবস্থা হয়। দমকলের তরফে সুউচ্চ ল্যাডার নিয়ে এসে হোটেলের ঘরে এবং ছাদে আটকে থাকা লোকজনকে উদ্ধার করে পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়। দমকল কর্মীদের ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় আগুন নেভানো গেলেও মধ্যরাত পর্যন্ত চলে উদ্ধারকাজ। পুলিস জানিয়েছে, অক্ষত অবস্থায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন আবাসিককে উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ছ’তলার ওই বহুতলে নীচে গ্যারেজ ও গুদাম রয়েছে। দোতালায় একটি ট্রান্সপোর্টের অফিস রয়েছে। তিনতলায় একটি রেস্তরাঁ চলে। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় হোটেল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে দমকল এবং পুলিস দেখেছে, হোটেলের বাইরে থেকে ভিতরের দিকে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের পাইপলাইন রয়েছে। কিন্তু আগুন নেভানোর জন্য যে জলাধার থাকা দরকার, তার সঙ্গে পাইপলাইনের কোনও সংযোগ নেই। গোটা বিল্ডিংয়ে থাকা পাইপলাইনে স্প্রিংকলার সহ যাবতীয় মেশিনারি লাগানো নেই। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই অর্ধ-নির্মিত ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা কোনও কাজেই আসেনি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। 
  • Link to this news (বর্তমান)