টরন্টো: কানাডার সাধারণ নির্বাচনে জয়ী ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি। সোমবার ভোটগ্রহণ শেষ হতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল ছবিটা। সমীক্ষক সংস্থাগুলি আভাস দিয়েছিল, কনজারভেটিভদের থেকে বেশি ভোট পাবে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির দল। সেটাই হল। জাস্টিন ট্রুডো জমানায় দল তীব্র প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার মুখে পড়েছিল। দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে সেই ছবিটা বদলে দিলেন কার্নি। তবে ৩৪৩ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছে খালিস্তানপন্থী নেতা জগমীত সিংয়ের নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। নিজের বার্নাবি সেন্ট্রালের আসনও পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি জগমীত। খালিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে তলানিতে। নিজ্জর কাণ্ডে শুরু থেকেই ভারতকে দায়ী করে তৎকালীন ট্রুডো সরকার। যাবতীয় অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে নয়াদিল্লি। অটোয়ার এই অবস্থানের নেপথ্যে ছিলেন ট্রুডো সরকারের সহযোগী জগমীত। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঠিক করার বার্তা দিয়েছিলেন কার্নি। এই আবহে লিবারেল পার্টির জয়ে আশার আলো দেখছে দিল্লি।
গত জানুয়ারিতে ট্রুডোর ইস্তফার পর উত্তরসূরি হিসেবে লিবারেল পার্টির দায়িত্ব নেন কার্নি। তখন অবশ্য আসন্ন নির্বাচনে লিবারেলদের টানা চতুর্থবার জয়ের আশা খুব একটা ছিল না। কিন্তু কানাডা সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি কার্নির দলের সহায়ক হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসেই কানাডাকে আমেরিকার ৫১ তম অঙ্গরাজ্য করে তোলার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন ট্রাম্প। এছাড়াও বাণিজ্য নিয়েও কানাডার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে সুর চড়ান কার্নি। শেষপর্যন্ত জাতীয়তাবাদের আবেগে ভর দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল তাঁর দল।
সোমবার জয় নিশ্চিত হতেই সমর্থকদের উদ্দেশে বার্তা দেন কার্নি। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার বিশ্বাসঘাতকতার অধ্যায় আমরা পেরিয়ে এসেছি। তবে শিক্ষাটা ভুললে চলবে না। ট্রাম্প আসলে আমাদের আলাদা করতে চাইছেন। সেটা কখনই হবে না।’ ইতিমধ্যে কার্নিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্স হ্যান্ডলে তাঁর বার্তা, ‘ভারত-কানাডা একে অপরের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা করে। এই সম্পর্ক আরও শক্ত করতে মুখিয়ে রয়েছি।’
ভোটের প্রস্তুতি পর্বের শুরুতেই কার্নি বলেছিলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নিমাণের সুযোগ রয়েছে। সমমনষ্ক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৈচিত্র্যময় করতে উদ্যোগী কানাডা।’ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কার্নির জয়ে ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন আটকে থাকা কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্টের (সিইপিএ) বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে অটোয়া।