সুপ্রকাশ মণ্ডল, দিঘা
রাজ-ধর্ম এবং ধর্মের রাজনীতি। এই ইস্যুতে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ধর্মোচ্চারণ হোক বা ধর্ম পালন— তা কখনও কারও একার হতে পারে না। সেখানে সবার অধিকার। মঙ্গলবার দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন করে এমনই মন্তব্য করলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম মুখে প্রচার করে হয় না।’ আজ, বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ার বিকেলে বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পরে খুলে যাবে মন্দিরের দ্বার। তার আগে মঙ্গলবার যজ্ঞ-সহ একাধিক আচার পালিত হয়। স্থাপিত হয় মন্দিরের ধ্বজা। মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেন মহাযজ্ঞে। তার আগে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে পুরোহিতদের এক জন মন্দিরের চূড়ায় পৌঁছে প্রথমবার ধ্বজাস্থাপন করেন।
যজ্ঞে মন্দিরের প্রথম যজমান হিসেবে পূর্ণাহুতি দেন মমতা। পুরো সময় তিনি তদারকি করেন সমস্ত আচার অনুষ্ঠানের। করেন মঙ্গলারতিও। তবে পুরোহিতরা জিজ্ঞেস করলেও নিজের নামে পুজো দেননি তিনি। যজ্ঞ শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্ণাহুতির পরে পুরোহিতরা আমার গোত্র জিজ্ঞেস করে। বলেছি, আমি আমার গোত্রে পুজো দিই না। আমি মা-মাটি-মানুষের নামে পুজো দিতে চাই। মা-মাটি-মানুষ ভালো থাকলে আমি ভালো থাকি। তাই রাজ্যবাসীর নামে পুজো অর্পণ করা হলো।’
মন্দির সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা আন্তর্জাতিক ডেস্টিনেশন হলো। আমরা গর্বিত, দেশও গর্বিত। সুন্দর স্থাপত্যের কাজ হয়েছে এখানে। পুরী থেকে দইতাপতিরা অনেকে এসেছেন। ইসকনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদ্যাপীঠ থেকে মুরাল ভাই, দক্ষিণেশ্বর থেকে কুশলভাই এসেছেন। বেলুড় মঠ, জয়রামবাটি-কামারপুকুর বিভিন্ন জায়গা থেকে সমস্ত ধর্মের লোকেরা এখানে এসেছেন। মানুষের আস্থা ও ভরসা, বিশ্বাস এবং ভালোবাসায় ভরে উঠবে এই তীর্থক্ষেত্র।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষ এসেছেন এখানে। প্রত্যেকেই আমাদের অতিথি। তীর্থস্থান সকলের জন্য। ধর্ম পালন করার অধিকার কারও একার নয়। হৃদয় দিয়ে দেখলে দেখবেন, সকলে সব জায়গায় যেতে পারেন।’ এর পরেই মমতা বলেন, ‘ধর্ম কখনও মুখে প্রচার করে হয় না। ধর্ম হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার জিনিস।’ তিনি জানিয়েছেন, বুধবার আড়াইটে থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে। তিনটের সময় দ্বারোদঘাটন হবে। এর পর মন্দির জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’
মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন তৃণমূলের একঝাঁক নেতা, সাংসদ, বিধায়ক। যজ্ঞের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা, মমতার ভ্রাতৃবধূ লতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন বাণিজ্য জগত থেকে শুরু করে রুপোলি জগতের তারকারাও।
উদ্বোধনের পরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সেখানে ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের নাচের অনুষ্ঠান রয়েছে। সঙ্গীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচি, নচিকেতা চক্রবর্তী, অদিতি মুন্সি-সহ এক ঝাঁক শিল্পী ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন দিঘায়।