এই সময়: সোমবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ যখন বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড নেওয়া হচ্ছিল হাওয়া অফিসের বিভিন্ন স্টেশনে, তখনও কেউ ভাবেননি, ১২ ঘণ্টার মধ্যেই একেবারে ডিগবাজি খাূবে থার্মোমিটার। বজ্রবিদ্যুৎ–সহ বৃষ্টির আবহে শনিবার রাত থেকেই লাগাম পড়েছিল তাপমাত্রায়।
কিন্তু সোমবার রাতের দিকে কয়েক ঘণ্টার ঝড়বৃষ্টি যে আবহাওয়ার পুরোনো রেকর্ডে এমন পরিবর্তন ঘটাবে, তা কে ভেবেছিল! এক সপ্তাহ আগে ২৩ এপ্রিল কলকাতার রাতের তাপমাত্রা ছিল ২৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলের মহানগরে উষ্ণতম দশটি রাতের অন্যতম ছিল সেই রাত। আর ২৯ এপ্রিল কলকাতার রাতের তাপমাত্রা নেমে গেল ১৯.২ ডিগ্রিতে — এপ্রিলের শীতলতম দশটি রাতের অন্যতম।
পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির (আইআইটিএম) রেকর্ড বলছে, এপ্রিলের কলকাতা শেষ বার ১৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি শীতল রাত দেখেছিল ২৭ বছর আগে ১৯৯৭–এর ১০ এপ্রিল। সে বার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি। ২০২৪ মানুষের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর আশঙ্কা ছিল ২০২৫ নিয়েও।
ইতিমধ্যেই ২০২৫–এর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি ইতিহাসের উষ্ণতম জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির তকমা পেয়েছে। ১৫ মার্চ দেশের প্রথম তাপপ্রবাহ রেকর্ড হয়েছে ওডিশায়। ২০২৪–এর তুলনায় এ বছর তাপপ্রবাহ ১২ দিন এগিয়ে এসেছে। এমনই সময়ে এপ্রিলের এই ‘উলট পুরাণ’।
আবহবিদদের রেকর্ড অনুযায়ী, এক বছর আগে ২৯ এপ্রিল কলকাতার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ২৯.৪ ডিগ্রি ও ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪–এর ৩০ এপ্রিল কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৯.৭ ডিগ্রি। ওই এপ্রিলেই ২৭ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত টানা চার দিন শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ছিল।
কিন্তু এ বছর দমকা হাওয়া আর বজ্রবিদ্যুৎ–সহ বৃষ্টির দৌলতে আবহাওয়ার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। সোমবার রাত সাড়ে আটটা থেকে ভোর পর্যন্ত কলকাতায় ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, দ্রুত পতন ঘটেছে তাপমাত্রায়। মঙ্গলবার আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশের উপরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত এবং একজোড়া পশ্চিমা নিম্নচাপ অক্ষরেখা এখনও যথেষ্ট সক্রিয়।
এদের মিলিত প্রভাবে শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এমনই দমকা হাওয়া এবং বজ্রবিদ্যুৎ–সহ বৃষ্টির আবহ বজায় থাকবে। ফলে, এই সপ্তাহে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে বাতাসে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের প্রভাবে দিনের বেলা ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি থাকবে।