এই সময়, দিঘা: ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ধাম মাহাত্ম্য নিয়ে পুরীর জগন্নাথ মন্দির এবং দিঘার মধ্যে তুলনা টানা শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরীর জগন্নাথ ধাম শ্রীক্ষেত্র যে এ দিক থেকে অনেক এগিয়ে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু দিঘার এই জগন্নাথ মন্দিরও যে অন্য অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পর্যটকদের আনাগোনার পাশাপাশি জগন্নাথ মন্দিরের টানে ভক্ত সমাগম বাড়বে দিঘায়। তার ফলে অন্য ধরনের ব্যবসাও বাড়বে বলে আশা স্থানীয় বাসিন্দাদের। ব্যবসার বৃদ্ধি মানেই কর্মসংস্থান অর্থাৎ স্থানীয় আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর ভিত শক্ত হওয়া। সে দিক থেকে দেখতে গেলেও এই জগন্নাথ মন্দির দিঘার বাণিজ্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভবনা।
একটা সময়ে যাতায়াত এবং পরিকাঠামোগত অনুন্নয়নের সমস্যা থাকায় দিঘায় পর্যটকদের বিশেষ আনাগোনা ছিল না। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবে যেত সমুদ্রসৈকত। ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘায় যেতে চাইতেন না অধিকাংশ পর্যটক। কিন্তু গত দেড়-দু’দশকে ওল্ড দিঘার পাশাপাশি নতুন ডেস্টিনেশন হিসেবে পর্যটক টানছে নিউ দিঘাও। আবার নিউ দিঘার দাপট বাড়ার ফলে এক সময়ে ওল্ড দিঘায় পর্যটক কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু সৌন্দর্যায়ন, লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো চালু করার পরে ওল্ড দিঘাতেও এখন পর্যটকদের ঢল নামছে।
উদয়পুরে ওডিশা সীমানা পর্যন্ত একাধিক হোটেল। ট্রেন ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি দিঘায় আসার অসংখ্য বাস রয়েছে। রেলপথে উত্তরবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে যাওয়ায় দিঘার জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে স্থানীয় পরিবহণও বাড়ছে। দিঘা থেকে তাজপুর সমুদ্র লাগোয়া রাস্তা মেরিন ড্রাইভও পর্যটকদের কাছে নতুন আকর্ষণ।
এমন এক সন্ধিক্ষণে আজ, বুধবার দুয়ার উন্মুক্ত হচ্ছে জগন্নাথ মন্দিরের। স্থানীয়রা বলছেন, এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে ব্যবসার পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। রেলস্টেশন লাগোয়া মন্দিরের আশপাশে প্রচুর দোকানপাট তৈরি করছে প্রশাসন। এলাকায় কিছু স্টল তৈরি করে তা বণ্টন করা হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও তৈরি হবে দোকানপাট।
আগে সমুদ্র সৈকত কিছুটা দূরে হওয়ায় পর্যটকেরা হয় নিউ দিঘা কিংবা ওল্ড দিঘায় থাকতে পছন্দ করতেন। কিন্তু মন্দির তৈরির সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু ভালো হোটেল চালু হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, বুধবারের পরে মন্দির প্রাঙ্গণ সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলে ভক্ত-পর্যটকদের ঢল নামবে।
দিঘার হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের বক্তব্য, ‘গত কয়েক বছরে দিঘায় পর্যটকদের ভিড় অনেক গুণ বেড়েছে। মাঝে অতিমারীর কারণে হোটেল ব্যবসা বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল। কিন্তু খুব কম সময়ের মধ্যে সেই খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। রথযাত্রায় দিঘায় আলাদা করে তেমন ভিড় এতদিন হতো না। এ বার থেকে হয়ত বাড়বে।’