• চিৎপুর মোড় সংলগ্ন হোটেলে আগুন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৪
    বর্তমান | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাতের শহরে ফের অগ্নিকাণ্ড। আর সেই অগ্নিকাণ্ডের জেরে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম কমপক্ষে ১৩ জন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তি চিকিৎসাধীন। গতকাল, মঙ্গলবার রাতে আচমকাই আগুন লাগে জোড়াসাঁকোর চিৎপুর মোড়ের কাছে একটি ছ’তলা হোটেলে। আতঙ্কিত হয়ে চারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন দুই ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় ও অপরজন গুরুতর আহত হন। মৃতের নাম মনোজ পাসোয়ান। তিনি ওই হোটেলের কর্মী। অপর কর্মী সঞ্জয় দাস গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর মাথায় যথেষ্ট আঘাত লেগেছে। হাত এবং পায়েও গভীর চোট রয়েছে বলে খবর। এই অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই দমকলের ১১টি ইঞ্জিন যায় ঘটনাস্থলে। ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন দমকলের কর্মীরা। তবে মাঝরাত পর্যন্ত ‘পকেট ফায়ার’ নেভানোর কাজ চলে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর শুরু হয় উদ্ধারকাজ। আর তাতেই দেখা যায়, ওই হোটেলের সিঁড়িতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন অনেকেই। তিনতলা, চারতলা এবং পাঁচতলার সিঁড়ি থেকে অচৈতন্য অবস্থায় অনেককেই উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। এইভাবে মোট ১৪ জনের দেহ উদ্ধার করে দমকল। পুলিসের অনুমান, অগ্নিকাণ্ডের জেরে ধোঁয়া বেরোতে থাকে ওই হোটেলে। আর সেই ধোঁয়াতেই দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এতজনের। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ওই হোটেলে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছিল না। কীভাবে আগুন লেগেছিল, তা স্পষ্ট নয়। তবে, দমকল ও পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, চারতলায় ইলেকট্রিক মিটার থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল, রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও কলকাতা পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা। চিৎপুর মোড় সংলগ্ন ৬, মদনমোহন বর্মন স্ট্রিটের বহুতল হোটেলে যখন আগুন লাগে, বহু মানুষ তখন ভিতরেই ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। একতলার ঘরে থাকা লোকজন প্রাণভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। প্রথমে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন। পরে দফায় দফায় আরও ছ’টি ইঞ্জিন পাঠানো হয়। গোটা এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। হোটেলের ঘরে আটকে পড়েন অনেকে। তাঁদের উদ্ধারে নামেন দমকলকর্মী থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিসের বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা। হোটেলের যে অংশে আগুন লেগেছিল, তার উল্টোদিক দিয়ে দড়ি বেঁধে বাসিন্দাদের বাইরে বের করার ব্যবস্থা করা হয়। দমকলের তরফে সুউচ্চ ল্যাডার নিয়ে এসে হোটেলের ঘরে এবং ছাদে আটকে থাকা লোকজনকে উদ্ধার করে পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গিয়েছে, ছ’তলার ওই বহুতলের নীচে গ্যারেজ ও গুদাম রয়েছে। দোতালায় একটি ট্রান্সপোর্টের অফিস রয়েছে। তিনতলায় একটি রেস্তরাঁ চলে। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় হোটেল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে দমকল এবং পুলিস দেখেছে, হোটেলের বাইরে থেকে ভিতরের দিকে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের পাইপলাইন রয়েছে। কিন্তু আগুন নেভানোর জন্য যে জলাধার থাকা দরকার, তার সঙ্গে পাইপলাইনের কোনও সংযোগ নেই। গোটা বিল্ডিংয়ে থাকা পাইপলাইনে স্প্রিংকলার সহ যাবতীয় মেশিনারি লাগানো নেই। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই অর্ধ-নির্মিত ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা কোনও কাজেই আসেনি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। 
  • Link to this news (বর্তমান)