• ধর্ম হৃদয়ের জিনিস, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পূর্ণাহুতি মমতার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • গোবিন্দ মুখার্জি ও দেবাশিস দাস– সন্ত্রাসবাদী হামলা ও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় সারাদেশ যখন উত্তাল, তখন পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় জগন্নাথদেবের মন্দির স্থাপন করে ভারতীয় অধ্যাত্মবাদের সঙ্গে সম্প্রীতির ও মিলনের বার্তা তুলে ধরলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বুধবার দুপুর আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যে এই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই সমুদ্রেই শ্রীচৈতন্যদেব জগন্নাথদেবের প্রেমে বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন। সেই ইতিহাস আজও অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। বাংলার সেই ইতিহাসের সঙ্গে আরও একটি নতুন অধ্যায় যোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    সাধারণত সপ্তাহান্তে পর্যটকরা যেতেন দিঘায় বেড়াতে। কিন্তু দিঘার গুরুত্ব এবং তাৎপর্য বেড়ে যাওয়ায় এখন তা আর শুধু একটি সাধারণ পর্যটন কেন্দ্র হয়েই রইলো না, তার সঙ্গে যুক্ত হল নতুন একটি পালক। আধ্যাত্মিকতার কারণে হাজার হাজার পুণ্যার্থী যেমন এখানে আসবেন শ্রীজগন্নাথদেবকে পূজা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করতে, তেমনই দেশ-বিদেশের সমস্ত শ্রেণির মানুষেরা এখানে সম্মিলিত হবেন সামুদ্রিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে এক গভীর সম্প্রীতির মিলনস্থল হয়ে উঠল দিঘা। এই সূত্রে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা নতুন এক আসার আলো দেখতে পাচ্ছেন। আগে যেখানে সমুদ্র সৈকতের অধিকাংশ এলাকা ডুবে থাকত অন্ধকারে, এখন সেখানে বাঁধানো সৈকতে সাজানো হয়েছে আলোর মালা। তৈরি হয়েছে উন্নত মানের প্রচুর হোটেল, যার ফলে পর্যটকদের থাকার অসুবিধে আর থাকবে না। সেই সঙ্গে প্রভূত উন্নতি হয়েছে পরিবহন ব্যবস্থার। এছাড়াও চা, মিষ্টি ও অন্যান্য খাবার দোকানের ব্যবসা উঠেছে ফুলে ফেঁপে। এরফলে সাধারণ গরিব ব্যবসায়ীরাও যে লাভবান হবেন, একথা বলাই বাহুল্য।

    গত বৃহস্পতিবার থেকে জগন্নাথ মন্দিরে চারটি কুম্ভের মাঝখানে মহাকুম্ভ জ্বালিয়ে চলছে যজ্ঞ। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনের স্নান সম্পন্ন হয়েছে দুধ দিয়ে। সেইসঙ্গে লক্ষ্মী, বিমলা, সত্যভামা সহ সব দেবদেবীর মূর্তিকেও স্নান করানো হয়েছে। চন্দননগরের শিল্পীদের মায়াবী আলোয় সেজে উঠেছে সৈকত নগরী দিঘা। শহর জুড়ে বাজছে মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর। পুরীর মন্দিরের রাজেশ দৈতাপতি, ইসকনের সহ সভাপতি রাধারমণ দাস প্রমুখের উদ্যোগে সম্পন্ন হচ্ছে সমস্ত আচার।

    মঙ্গলবার বিকেলে চারটেয় মাহেন্দ্রক্ষণে মহা যজ্ঞে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আহুতি দিয়েছেন তিনি। মহাযজ্ঞে ব্যবহার করা হচ্ছে ১০০ কুইন্টাল আম ও বেল কাঠ এবং দুই কুইন্টাল ঘি। বিভিন্ন তীর্থস্থান থেকে মঙ্গল কলসে আনা হয়েছে জল এবং সেই কলস স্থাপন করা হয়েছে যজ্ঞ কুণ্ডে। মহাযজ্ঞের সমাপ্তির পর তিন দেবদেবীকে সুসজ্জিত সজ্জায় ঘুম পাড়ানো হয়। আজ বিকেল চারটেয় তাঁদের ঘুম ভাঙিয়ে হবে প্রাণপ্রতিষ্ঠা, স্নানপর্ব ও পুণ্যাভিষেক। মন্দিরের আচার পালনে যুক্ত রয়েছেন ৬০ জন এবং পূজাপালনে রয়েছেন পুরীর রাজেশ দৈতাপতি সহ ৩৫জন। এখন থেকে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, অন্যপাশে ভিডিও দিয়ে তা দেখানো হবে। সামনের চত্বরে রয়েছে ভক্তদের বসার আয়োজন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এইসব আয়োজন খতিয়ে দেখেছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পুলক রায়, সুজিত বসু ও স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সঙ্গে রয়েছেন হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, ডিজিপি রাজীব কুমার প্রমুখ প্রশাসনিক পদস্থ কর্তারা।

    এই উপলক্ষে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাতে অংশগ্রহণ করবেন নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, গায়ক নচিকেতা, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ইমন চক্রবর্তী প্রমুখ। ইতিমধ্যে বেজে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এবং ইন্দ্রনীল সেনের গাওয়া জগন্নাথ দেবের গান– ‘তোমায় মোদের আস্থা, তোমায় মোদের বিশ্বাস, তোমায় ভালোবাসা … জয় জগন্নাথ, জয় হে।’

    কলকাতা থেকে দিঘা পর্যন্ত রাস্তায় রয়েছে অসংখ্য তোরণ। তাতে লাগানো রয়েছে প্রভু জগন্নাথ ও মন্দিরের ছবি। মঙ্গলবার থেকেই দিঘায় বাড়তে শুরু করেছে দর্শনার্থীদের ভিড়। নিঃসন্দেহে এটি একটি আন্তর্জাতিক ঘটনা। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তাই রয়েছে আঁটোসাঁটো। রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, সেই সঙ্গে পুণ্যার্থীরা গরমে যাতে কষ্ট না পান, তাই তাঁদের দেওয়া হবে ২২ হাজার গামছা। অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে আজ প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা ইতিহাসের পথে এক মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)