• ব্যাগ-সাইকেল মাথায় তুলে নদী পেরিয়ে স্কুলে
    এই সময় | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • প্রবীর কুণ্ডু, তুফানগঞ্জ: মাথায় তোলা স্কুলের ব্যাগ। অবশ্য সেই ব্যাগে বইখাতার সঙ্গে রয়েছে শুকনো এক সেট জামা–কাপড়ও। এই ভাবেই নদীপার করে স্কুলের পথে রওনা হয়েছে ওরা। কেউ কেউ আবার মাথায় তুলেছে বাহন সাইকে‍লটিও। কারণ, নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটি জলের তোড়ে কবে ভেসে গিয়েছে! রায়ডাকের বুক জল পেরিয়ে যখন ও পারে স্কুলে পৌঁছবে ততক্ষণে সবাই ভিজে কাক৷ সড়কপথেও যাওয়া যায়, কিন্তু তাতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তবে নদীপথে গেলে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরেই স্কুল। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ভাবেই নদী পার হয়ে যাতায়াত করে খুদেরা৷

    রায়ডাক নদীর এক পারে বারোকোদালি গ্রাম। অন্য পারে তুফানগঞ্জের বেগারখাতা গ্রাম৷ সেই গ্রামেই রয়েছে তুফানগঞ্জ বিবেকানন্দ সরকারি বিদ্যালয়। তাই বারোকোদালির কচিকাঁচাদের কম সময়ে স্কুলে পৌঁছতে রায়ডাক নদীই একমাত্র ভরসা। আগে এখানে নৌকো চলাচল করলেও এখন আর তা চলে না। তাই হেঁটে বা সাঁতরে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। বছরের অন্যান্য সময়ে নদীতে জল কম থাকলেও ফি বর্ষায় অন্য রূপ ন‍েয় রায়ডাক।

    তুফানগঞ্জ বিবেকানন্দ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া নীলাদ্রি দাস, অনুষ্কা দাসদের কথায়, ‘ঘুরপথে স্কুলে যেতে হলে গাড়িভাড়ায় অনেক খরচ হয়ে যায়৷ আমাদের বাবা–মায়ের পক্ষে রোজ যাতায়াতের জন্য টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই কম সময়ে নিখরচায় আমাদের নদী পেরিয়েই স্কুলে আসতে হয়৷’ সমস্যার কথা মেনে নিয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিক্রমজিৎ সাহা বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের দু’টি করে পোশাক নিয়ে স্কুলে আসতে হয় । নদী পার হতে গিয়ে অনেক সময়েই তাদের বইখাতা ভিজে যায়। আমরাও ওদের আসা– যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি৷’ বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছে তিনি।

    বারোকোদালি গ্রামের এক বাসিন্দা প্রেমানন্দ দাস বলেন, ‘অনেক বছর ধরে কোনও সাঁকো গড়ে ওঠেনি নদীতে৷ তাই এভাবেই গ্রামের ছেলেমেয়েদের চলাচল করতে হয়। কোনও প্রয়োজনে ও পারে যেতে হলে আমাদেরও এভাবেই পারাপার করতে হয়৷’ যদিও একটি সাঁকো তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বারোকোদালি–২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বাবলু বর্মন। তবে গ্রামের এই দুর্দশা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন।

    কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, ‘ওই এলাকায় বিজেপি বিধায়ক জয়ী হয়েছেন। কিন্তু এলাকার কোনও উন্নয়নমূলক কাজ তাঁকে করতে দেখা যায়নি। এই নদীতে কেন স্থায়ী সেতু হয়নি, তার জবাব বিধায়ককে দিতে হবে৷’ এ প্রসঙ্গে তুফানগঞ্জের বিজেপির বিধায়ক মালতী রাভার পাল্টা বক্তব্য, ‘তৃণমূলের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। এত দিন তৃণমূলের জেলা পরিষদের তহবিল থেকে কেন এই প্রকল্পের কোনও কাজ হয়নি?’

  • Link to this news (এই সময়)